বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণ হওয়া ৫২টি পণ্য বাজারে থেকে তিনদিনের মধ্যে প্রত্যাহার করে নিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
এছাড়া আজ বুধবার হাইকোর্টের এক নির্দেশনায় বলা হয়, ৯৬টি পণ্যসহ লাইসেন্সধারী কোম্পানির নাম একমাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বিএসটিআইকে বলা হয়েছে। এছাড়া কোন কোন কোম্পানির দুধে ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তা একমাসের মধ্যে জানাতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় বলা হয়, বিএসটিআই এর পরীক্ষায় মানের দিক থেকে ৫২টি পণ্য অকৃতকার্য হয়েছে। হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং ৫৩৫০/২০১৯-এর গত ১২ মে-এর আদেশ বলে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-এর ৪৩ ধারা অনুযায়ী ওই ৫২টি পণ্য/ব্র্যান্ডসমূহ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে বাজার হতে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হলো। গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারের পরে নির্দেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই ৫২ পণ্য উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী, পরিবেশনকারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা এবং গ্রাহককে উক্ত পণ্যসমূহ উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, পরিবহন, সরবরাহ, ক্রয় ও বিক্রয় এবং ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করা হলো। এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চিহ্নিত নিম্নমানের পণ্যগুলো বাজার থেকে এখনো প্রত্যাহার করে নেয়নি কোনো প্রতিষ্ঠান।
বাজার থেকে প্রত্যাহার করা সেই ৫২ পণ্য হলো-
১. তীর ব্র্যান্ডের সরিষার তেল
২. জিবি ব্র্যান্ডের সরিষার তেল
৩. পুষ্টির সরিষার তেল
৪. রূপচান্দার সরিষার তেল
৫. সান ব্র্যান্ডের চিপস
৬. আরা ব্র্যান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার
৭. আল সাফি ব্র্যান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার
৮. মিজান ব্র্যান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার
৯. মর্ণ ডিউ ব্র্যান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার
১০. ডানকানের ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার
১১. আর আর ডিউ ব্র্যান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার
১২. দিঘী ব্র্যান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার
১৩. প্রাণের লাচ্ছা সেমাই
১৪. ডুডলি ব্র্যান্ডের নুডলস
১৫. টেস্টি তানি তাসকিয়া ব্র্যান্ডের সফট ড্রিংক পাউডার
১৬. প্রিয়া সফট ড্রিংক পাউডার
১৭. ড্যানিশ ব্র্যান্ডের হলুদের গুড়া
১৮. প্রাণের হলুদের গুড়া
১৯. ফ্রেস ব্র্যান্ডের হলুদের গুড়া
২০. এসিআই পিওর ব্র্যান্ডের ধনিয়া গুড়া
২১. প্রাণ ব্র্যান্ডের কারী পাউডার
২২. ড্যানিস ব্র্যান্ডের কারী পাউডার
২৩. বনলতা ব্র্যান্ডের ঘি
২৪. পিওর হাটহাজারির মরিচের গুড়া
২৫. মিষ্টিমেলার লাচ্ছা সেমাই
২৬. মধুবনের লাচ্ছা সেমাই
২৭. মিঠাই এর লাচ্ছা সেমাই
২৮. ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই
২৯. এসিআইয়ের আয়োডিনযুক্ত লবণ
৩০. মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ
৩১. কিং ব্র্যান্ডের ময়দা
৩২. রূপসা ব্র্যান্ডের দই
৩৩. মক্কা ব্র্যান্ডের চানাচুর
৩৪. মেহেদি ব্র্যান্ডের বিস্কুট
৩৫. বাঘাবাড়ী স্পেশালের ঘি
৩৬. নিশিতা ফুডসের সুজি
৩৭. মধুযুলের লাচ্ছা সেমাই
৩৮. মঞ্জিল ফুডের হুলুদের গুড়া
৩৯. মধুমতি ব্র্যান্ডের আয়োডিন যুক্ত লবণ
৪০. সান ব্র্যান্ডের হলুদের গুড়া
৪১. গ্রীনলেনের মধু
৪২. কিরণ ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই
৪৩. ডলফিন ব্র্যান্ডের মরিচের গুড়া
৪৪. ডলফিন ব্র্যান্ডের হলুদের গুড়া
৪৫. সূর্য ব্র্যান্ডের মরিচের গুড়া
৪৬. জেদ্দা ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই
৪৭. অমৃত ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই
৪৮. দাদা সুপারের আয়োডিন যুক্ত লবণ
৪৯. তিনতীরের আয়োডিনযুক্ত লবণ
৫০. মদিনা, স্টারশীপের আয়োডিনযুক্ত লবণ
৫১. তাজ ব্র্যান্ডের আয়োডিনযুক্ত লবণ
৫২. নূর স্পেশালের আয়োডিন যুক্ত লবণ
প্রসঙ্গত, বিএসটিআই-এর পরীক্ষায় নিম্নমানের ৫২ ভোগ্যপণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য গত ১২ মে আদেশ দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এসব খাদ্যপণ্য বিক্রি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন।