ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতাদের চাঞ্চল্যকর তথ্য ভাইরাল!

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে আলোচনা এবং সমালোচনা। সোমবার (১৩ মে) এ নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে পদবঞ্চিতদের প্রহারের অভিযোগও আসে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন জনের স্ট্যাটাসে পাওয়া যাচ্ছে চাঞ্চলকর তথ্য।

পদবঞ্চিত নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত হয়েছে। গঠনতন্ত্রে বিবাহিতদের ছাত্রলীগে পদ-পদবী না পাওয়ার বিধান থাকলেও এবার রেকর্ড পরিমাণ বিবাহিতদের স্থান দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সহ-সভাপতির পদ পাওয়া সোহানী হাসান তিথির দুই বিয়ে জানিয়েছেন অনেকেই। সর্বশেষ বিয়ে করে একজন ব্যাংকের সঙ্গে ঘর করছেন এমন ছবিও প্রকাশ পেয়েছে।

একই অবস্থা সহ সম্পাদক আঞ্জুমানারা অনু, রুশি চৌধুরীর। সাদিক খান এবং আরও দুইজন সহ-সভাপতিসহ অন্তত ৬ জন বিবাহিত রয়েছেন কমিটিতে। পরিবার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী ছিল এমন অন্তত ১৩ জন রয়েছেন কমিটিতে।

অস্ত্র নিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন এমন একজন হয়েছেন সহ-সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখের কনসার্টে আগুন দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত অন্তত ২০ জন গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নিজ জেলার ২২ জনকে নেতা বানানো হয়েছে।

ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতার স্থান পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এর মধ্যে সহ-সভাপতি আবু সাঈদের নাম উল্লেখ করে দাবি করেছেন, সাঈদ বিবাহিত এবং বয়স নেই।

এছাড়া শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাকে আজীবন বহিষ্কারের ছাত্রলীগের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিও তুলে ধরেছেন তিনি। এছাড়া আরেক সহ-সভাপতি এস এম হাসান আতিকের পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি লিখেছেন, হাসান আতিক ৩৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম সোহাগ এক নেত্রীর নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পদ পাওয়ার পর পরই বিএনপি নেতার মেয়ের আমাকে হুমকি দেওয়া দেখে আমি মোটেও অবাক হইনি।

সেদিন যেমন বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই আওয়ামী লীগ সভাপতির মাথা ফাটিয়েছিল। বিষয়টা অনেকটা তেমনই। আমার দাদা-নানাকে গালি দিতে ইচ্ছে করছে, কেন তারা এলাকায় আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা না করলে তো আজ হয়তো এই পথে আসা হতো না।’

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এনায়েত হোসেন রেজা অনেকের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ছেলের পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, ‘এক ভাগ শিবির-এক ভাগ ছাত্রদল-এক ভাগ বিবাহিত-এক ভাগ বয়সোত্তীর্ণ (২৯+), এক ভাগ বউ পিটিয়ে মারা সৈনিকরা পোস্ট পাইছে সেটা সমস্যা নয়; সমস্যা হলো আশিক নামে চিকিৎসা বিজ্ঞান শাখার পদধারী একটা কর্মী পোস্ট পাইছে। ভিসির ছেলে বলে কি এলিয়েন জাদু হয়ে গেছে?’

এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক উপ-সম্পাদক রকিবুল ইসলাম সাকিবের পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং এ সংক্রান্ত ছবি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খাজা খায়ের সুজন লিখেছেন, ‘ভাই আপনি জিতছেন। এই ছেলে বিবাহিত, এর নাম রকিবুল ইসলাম সাকিব। সে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শোভন ও রাব্বানীর কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক উপ-সম্পাদক হয়েছে।’

ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর বিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন দাবি করে ফেসবুকে প্রমাণ দিয়ে লিখেছেন, ‘চাকুরীজীবী! সৃজন ভুঁইয়া, সহ-সভাপতি। ভালোতো ভালো না...।’

তবে সবচেয়ে আলোচিত যে বিষয়টি সেটি হলো ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে বিবাহিত দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস ও ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে।

এই বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন স্ট্যাটাসও দিয়েছে ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রী। ১৩ মে সোমবার ছাত্রলীগের ৩০১ জনকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে কোনো পদ পায়নি একাধিক পদ প্রার্থীরা।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির নেত্রী খাদিজাতুল কুবরা। গত কমিটিতে তিনি সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৩ মে সোমবার মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগেরই অন্য একটি গ্রুপের হামলায় আহতদের মধ্যে তিনিও একজন। পরে তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।

খাদিজাতুল কুবরা লেখেন, ‘কোমরে, পিঠে লোহার চেয়ার দিয়ে মারছে। পরে প্লাস্টিকের চেয়ার ছুঁড়ে মারতে থাকে। আমি বাইরে যাচ্ছি, পরেই দেখি তিলোত্তমা পড়ে গেছে। ওকে শুইয়ে পানি দিলাম। পরে যখন বাইরে আসলাম তখন কিছু ছেলে ধাওয়া দিলো। তখন আল আমিন রহমান আমাকে ধরে কোনো রকম রক্ষা করলো।’

হামলার শিকার আরো এক নেত্রী ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জারিন দিয়া। এর আগে তিনি গণিত বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে উদ্দেশ করে ফেসবুকে এই নেত্রী লিখেছেন ‘রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানী ভাই, আপনারা যেসব মেয়েদের কমিটিতে রেখেছেন, তারা কয়দিন থেকে রাজনীতি করে?

নিজে বিবাহিত বলে কমিটিতে দুনিয়ার বিবাহিত মেয়েদের রেখেছেন। গোলাম রাব্বানী ভাই আমাকে সবার সামনে বলছিলেন, দুই দিনের মেয়ে কেমনে পোস্ট পাইছো বুঝি নাই। অনেক তথ্য অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্যে। এই বিবাহিত বিতর্কিত কমিটি মানি না, মানবো না। আমার শ্রমের মূল্য দিতে হবে আপনাদের।’

এই স্ট্যাটাসের বিষয়ে জারিন দিয়া বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে বলেন, ‘হ্যাঁ, এটি আমার পোস্ট।’ ছাত্রলীগের সভাপতি বিবাহিত এই বিষয়ে তার কাছে কী প্রমাণ রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কয়েকটি ছবি আছে, যেগুলো দেখলে সবাই বুঝতে পারবে। তবে, সময় আসুক সে ছবিগুলো প্রকাশ করবো। এছাড়া তিনি যে বিবাহিত তা সবারই জানা আছে। আর রাব্বানী আমাকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই পদ দেননি।’

২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগ ২৯ তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিজেরা কমিটি করতে ব্যর্থ হলে ৩১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক অর্পিত ক্ষমতাবলে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন। দীর্ঘ এক বছর পর ১৩ মে সোমবার ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি প্রকাশ করা হয়।

-সময় নিউজ

শেয়ার করুন: