প্রতিদিন রাজধানীতে ইফতার বিতরণ করে বৌদ্ধ বিহার

শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। মঙ্গলবার (৭ মে) থেকে বাংলাদেশে রোজা শুরু হয়েছে। রোজা বা সিয়াম ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়। সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা।

এদিকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে গত ১০ বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির রাখছেন রাজধানীর বাসাবো ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহার। প্রতি বছর রমজান মাস এলেই রোজাদারদের মাঝে ইফতার বিতরণ করেন তারা।

প্রতিদিন মাগরিবের আজানের ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই বৌদ্ধ মহাবিহারে লাইনে দাঁড়িয়ে ইফতারের প্যাকেট গ্রহণ করেন রোজদাররা। বিহার থেকে পাঁচশ শতাধিক প্যাকেট বিতরণ করা হয় প্রতিদিন। এ জন্য গড়ে ১০ হাজার টাকারও বেশি খরচ করতে হয় বিহার কর্তৃপক্ষের। মাসের হিসেবে সেটি তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়।

বৌদ্ধ বিহারের এমন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় খুশি এলাকার স্থানীয় লোকজন। বিহারের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জাফর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এ দেশের প্রতিটি ধর্মের দায়িত্বশীল মানুষগুলো যদি এমন আচরণ করতেন, তাহলে আমাদের দেশটা সত্যিই সুন্দর হতো। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর উল্টোটা ঘটে। বৌদ্ধ বিহারের এমন আয়োজনে ধর্মগুরুদের প্রতি শ্রদ্ধা।’

বিহার থেকে প্রতিদিন ইফতার সংগ্রহ করেন রিকশাচালক রশিদ মিয়া। ইফতারের লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘এখানকার ভিক্ষুদের আচরণ অনেক ভালো। তাদের আচরণে আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই। ইফতারের সময় আমাদের মতো গরিবদের কথা এরা ভাবেন— সেটা তো অনেক আনন্দের।’

ইফতারের জন্য দেওয়া ছোলা, মুড়ি আর জিলাপির এই প্যাকেটকে ভালোবাসার প্যাকেট হিসেবে দেখেন রশিদ। তিনি বলেন, ‘ইফতারের এ প্যাকেট আসলে গরিবের জন্য ভালোবাসা।’ রশিদ জানান, গত দু’বছর ধরে এই বিহারেই ইফতার করেন তিনি।

ইফতার বিতরণ কার্যক্রমে নিয়োজিত মহাবিহারের আবাসিক ভিক্ষু কমল ভান্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মানুষের মনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। দুনিয়ার সব মানুষের দুঃখ হয়তো আমরা নিঃশেষ করে দিতে পারব না, তবে অল্প কিছু মানুষের জন্য হলেও সেই চেষ্টাটি আমরা করব।’

শেয়ার করুন: