৪৪ বছর ধরে ১২ মাসই সন্তানের জন্য রোজা, কিন্তু কেন ?

সেই ১৯৭৫ সাল থেকে আজ প্রর্যন্ত। যে কিনা একটি দিনও রোজা ব্যাতিত থাকেননি। কিন্তু কেন এই ৪৪ বছর ধরে রোজা রাখা ? বলছিলাম ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বিধবা ভেজিরন নেছার কথা।

তার বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম ১১ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালে হারিয়ে যান। হাজারো খোঁজার পরেও সন্তানকে খুজেঁ না পেয়ে মা প্রায় পাগল। পরবর্তিতে সন্তানকে ফিরে পেতে আরজি করেন মহান আল্লাহর দরবারে।

১২ মাস রোজা রাখা নিয়ে সুখিরণ নেছা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “তার বয়স যখন ২৬ বছর, তখন বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম হারিয়ে যান। দীর্ঘদিন খুঁজেও ১১ বছর বয়সী শহিদুলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

শেষে সন্তান ফিরে আসবে এই মানতে তার বাড়িতে প্রতিদিন ছাগল জবাই করে শিরণী দেওয়া হতো। স্থানীয় বাজার গোপালপুর, মামুশিয়া ও চোরকোল গ্রামের মানুষ এই শিরণী খেতে তার বাড়ি আসতো।”

এসময় তিনি মসজিদ ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেন, সন্তান ফিরে এলে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য রোজা পালন করবেন সারাবছর। হারিয়ে যাবার দেড়মাস পর সন্তান বাড়িতে ফিরে এসে 'মা' বলে ডাক দেন। শান্তির পরশ পান ভেজিরন নেছা। এরপর থেকেই প্রতিজ্ঞা রক্ষার্থে দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে, বারোমাস রোজা পালন করছেন এই মমতাময়ী মা।

এলাকাবাসী জানান, অভাব অনটনের পাশাপাশি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন ভেজিরন নেছা। তারপরেও সন্তানের কল্যাণে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেননি তিনি।

যে ছেলের জন্য সুখিরন নেছা ১২ মাস (৫ দিন ব্যতীত) রোজা রাখেন সেই বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম জানান, আমার জন্য মা কষ্ট করে রোজা রাখেন। আমি রোজা রাখতে নিষেধ করলেও তিনি শোনেন না। অসুখ-বিসুখ হলেও তিনি রোজা ভাঙেন না। তিনি আরো বলেন, আমি যতটুকু পারি সহায়তা করি। তবে তিনি আমাদের মুখাপেক্ষী নন।

এলাকার ইউপি সদস্য ও মধুহাটী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তহুরুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধা সুখিরন ওরফে ভেজিরন নেছার ১২ মাস রোজা পালনের কথা চিন্তা করে তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। তবে তার বাড়িঘর নেই। ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।

শেয়ার করুন: