ছোট্ট শিশু

এই রমজানেও একটু খাবারের আশায় রাজিয়া-মীমরা রাস্তায়!

শনিবার (১১ মে) বিকাল তিনটা। অফিসের কাজে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন এলাকায়। কাজ শেষে ফেরার পথে চোখে পড়ল এক হৃদয় বিদারকদৃশ্য। টোকিও স্কয়ারের মূল ফটকে হাতে জুসের প্যাকেট ও কানে মোবাইল ফোন নিয়ে কথা বলছিলেন এক যুবতী।

ওই যুবতী নিজের মতো করে কথা বলছিলেন আর হাটছিলেন কিন্তু তার পিছন পিছন পায়ের কাছে ঘুরতে ছিল ছোট্ট শিশু রাজিয়া (৪-৫)। ওই যুবতী ফোনে ব্যস্ত থাকলেও রাজিয়া নজর ছিল ওই যুবতী হাতে থাকা জুসের প্যাকেটের দিকে। পবিত্র এই রমজান মাসেও একটু খাবারের আশায় এভাবেই হাজার হাজার শিশু ঘুরে সমাজের বিত্তশালীদের পায়ের কাছে।

ছোট্ট রাজিয়ার চাহনি চোখেই পড়ল না ওই যুবতীর। তিনি নিজের মতো করেই রাজিয়াকে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। আর রাজিয়াও নাছোড় বান্দা জুসের প্যাকেটের আশায় তার পিছু ছাড়ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত হার মানল রাজিয়া। কারণ রাজিয়াকে এড়িয়ে চলে গেলেন ওই যুবতী। আমি সাংবাদিক হওয়ায় এবং মানবিক বিষয়টি চিন্তা করে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে বিষয়টি অবলোকন করছিলাম। দেখলাম, হার মানা রাজিয়ার চোখে-মুখে ব্যর্থতার গ্লানি।

ছোট্ট শিশু

বিষয়টি দেখে আমার ভেতরে থাকা মানুষটি নিজের অজান্তেই কখন যেন রাজিয়াকে কাছে ডেকে আনল। হঠাৎ করেই রাজিয়া ও আমার সাথে যোগ দিল রাজিয়ার বড় বোন মীম (৮-১০)। এরপর আমি অল্প সময় রাজিয়া ও তার বড় বোন মীমের সাথে কথা বললম। মীম জানাল, ওরা ঢাকা উদ্যানের একটি বস্তিতে বাবা-মায়ের সাথে থাকে। গ্রামের বাড়ি বরিশাল বাকেরগঞ্জ। বাবা-অসুস্থ থাকায় এভাবেই ওদের খাবারের জোগাড় হয়।

মীম আমাকে বলে, তাদের এই ছোট্ট দুটি দেহ খাবার খেয়েছে গত রাতে। রোজা না রেখেও এখন পর্যন্ত না খেয়ে আছে তারা। অনাহারে-অর্ধাহারে কাতরাচ্ছে এই দুটি শিশু। এরপর আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী ওদের হাতে কিছু টাকা দিয়ে চলে এলাম।

অফিসে এসে কেন যেন ওদের অসহায় চাহনি আমাকে তাড়া করছিল। সেই তাড়া থেকেই এ লেখাটা লিখেছি। আপনার যারা আমার এই লেখাটা পড়বেন সবার কাছে আমার অনুরোধ আপনাদের যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা দয়া করে আপনার পাশে থাকা এসব অসহায় মানুষের একটু হলেও সাহায্য করুন।

শেয়ার করুন: