এমন বাংলাদেশ কী আমরা চেয়েছি?

পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে ধর্ষণ, বেপরোয়া চালকের হাতে পথচারী নিহত ও দুর্নীতিসহ নানান অনিয়ম। স্বাধীনতার অর্ধশতকের মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আমাদের যদি বারংবার এসব নিয়ে ভাবতে হয়, তা দেশের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্টিজনরা।

এসব বিষয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সত্যিই এসব আর সহ্য করা দূরহ হয়ে পড়েছে। এসব অপকর্ম করার জন্য কি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল? এত ধর্ষণ কী ভাবা যায়, হঠাৎ দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ সমাজে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। এসবের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেই দায়ী বলে আমি মনে করছি।

বর্তমানে মানুষ নিজেদেরকে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের আধুনিক, শিক্ষিত, আত্মগর্বে গর্বিত বাঙালি জাতি হিসেবে পরিচয় দেবার আকুতিই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও একুশে পদক প্রাপ্ত কলামিস্ট অধ্যাপক যতীন সরকারের।

তিনি বলেন, এই সময় এসে এমন ভীতিকর বাংলাদেশের চিত্র দেখতে হবে তা কল্পনাতেও ভাবতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য, অথচ দেশে বৈষম্য দিনকে দিন বেড়েই চলছে।

এদিকে শুক্রবার (১০ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নতি দৃশ্যমান কিন্তু এই উন্নতির অন্তরালে মানুষ চাপা আর্তনাদ করছে এ বিষয়টা যেন লুকানের চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের সাবির্ক অবস্থা ভালো নয়।

এটা অস্বীকার করার কী সুযোগ আছে? রাষ্ট্রের কোন মানুষ নিরাপদে নেই। এমন অনিরাপদ অবস্থা শুধু ৭১ সালেই দেখেছিলাম। এর বড় উদাহরণ হচ্ছে ধর্ষণ। এমন নৈরাজ্য রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখিনি।

দৃশ্যমান দুর্ভিক্ষ না থাকলেও দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে দাবি করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আজকে দেশে যে রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে, এর চেয়ে খারাপ অবস্থা অতীত ইতিহাসে ছিল কি না আমার জানা নেই। আমরা দুর্ভিক্ষ দেখেছি যে দুর্ভিক্ষে অনেক মানুষ মারা গেছে। কিন্তু আজকে বাংলাদেশে দৃশ্যমান কোন দুর্ভিক্ষ না থাকলেও নীরব দুর্ভিক্ষ আছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত কী দেখতে পাচ্ছি, নুসরাত জাহানের ঘটনার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ স্থানীয় নেতা জড়িত ছিল যা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরেছি।

দুষ্কৃতিকারীরা সবাই মিলে প্রমাণ করতে চাইল যে নুসরাত আত্মহত্যা করতে চেয়েছে। এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির এক নার্সকে বাসের মধ্যে ধর্ষণ করে হত্যা করা করেছে নারকীয় ভাবে। এটা কী বাংলাদেশের চিত্র হতে পারে। এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনি শিক্ষাবিদের বক্তব্য প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের কথা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন খিলগাঁওয়ের এক নারী উম্মে সালমা।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মুক্তিযুদ্ধের ভুয়া সনদে পদোন্নতি নিতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন। অথচ যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে তারাই যদি দুর্নীতি করে তাহলে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা কী তা সহজে অনুধাবন করা যাচ্ছে। আমরা খুব কষ্ট হয়, পুঁজিবাদের অধীনে দাস হয়ে যাচ্ছি।

এ ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে রাষ্ট্রের মালিক শ্রেণির সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণির যে শোষণের সম্পর্ক তা ভেঙে দিতে হবে। বিপ্লবের মাধ্যমে পুরনো রাষ্ট্রকে ভেঙে এমন রাষ্ট্র করতে হবে, যে রাষ্ট্র মানবিক হবে, যেখানে নারী ধর্ষিত হবে না, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের নামে প্রতারণা করবে না কেউ। মানুষ তার অধিকার পেতে কারও দারস্থ হবে না।

আজ রবিবার (১১ মে) মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, সরকার উন্নয়ন করছে কোন সন্দেহ নেই। সবকিছুতেই রোল মডেলের কথা বলতে বলতে বাংলাদেশ এখন হত্যা-গুম-খুন-ধর্ষণ ও ভোট ডাকাতির রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।

শেয়ার করুন: