একটি দেশ কতটা দরিদ্র আর কতটা ধনী তা নির্ভর করে সেই দেশের মাথাপিছু আয়, সম্পদের পরিমাণ ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের উপর। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় জনগণের নাগরিক সুবিধার মান, মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিতকরণ, অভ্যন্তরীণ অবস্থাও বলে দেয় দেশেটির অর্থনৈতিক অবস্থা।
মানুষের জীবনের মতো বিশ্বজুড়ে একেকটি রাষ্ট্রও নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তের শ্রেণীতে বিভক্ত। তারই ধারাবাহিকতায় ও বিভিন্ন মানদণ্ডের বিচারে পৃথিবীর দরিদ্রতম কিছু দেশ নিয়ে এই আয়োজন।
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো: ২০১৭ জিডিপি পার ক্যাপিটা - ৪৩৯ মার্কিন ডলার, ২০১৯ জিডিপি পার ক্যাপিটা (সম্ভাব্য) - ৪৭৫ মার্কিন ডলার. ২০২৩ জিডিপি পার ক্যাপিটা (সম্ভাব্য) - ৫৫১ মার্কিন ডলার।
যদিও কঙ্গো প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। দুর্ভাগ্যবশত সেই দেশটিই এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হিসেবে প্রথম স্থানে নাম লিখিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কঙ্গোয় রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। জোশেফ কাবিলার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট ২০০১ সালে গুপ্তহত্যার শিকার হলে কঙ্গোর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন কাবিলা।
এখনও তিনিই দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন, যে কারণে নির্বাচনের দাবিতে বাড়ছে অস্থিরতা। একাধিকবার নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও বারবার নির্বাচনের আয়োজন করা থেকে সরে আসেন কাবিলা। এরপর ২০১১ সালে এক বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে কাবিলা পুনর্নির্বাচিত হন। কিন্তু গেল আগস্টে তিনি ঘোষণা দেন, তিনি আর নির্বাচন করতে চান না।
তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো দেশটিতে ‘গণতান্ত্রিক’ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। চলতি ডিসেম্বরের ২৩ তারিখে ছিল নির্বাচনের দিন। কিন্তু দেশটির প্রধান গুদামে অগ্নিকাণ্ড এবং ইবোলা মহামারী আকার ধারণ করায় নির্বাচন পিছিয়ে যায়। সেটা ৩০ ডিসেম্বর রবিবারে স্থানান্তরিত করা হয়। যদিও দেশটির অস্থিতিশীল তিন শহরে নির্বাচন মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিকভাবে কঙ্গোর বেহাল দশার পেছনে রপ্তানিযোগ্য পণ্য কপার ও কোবাল্টের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব প্রধান করে দেখা হয়। যদিও আগামী বছর সেই কপার আর কোবাল্টের কারণেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক সম্পদের চেয়ে দারিদ্র্যের চরম পর্যায়ে কঙ্গোর যাওয়ার পেছনে প্রধানতম কারণ হিসেবে এই অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকেই দেখা হয়।
মোজাম্বিক: ২০১৭ জিডিপি পার ক্যাপিটা - ৪২৯ মার্কিন ডলার, ২০১৯ জিডিপি পার ক্যাপিটা (সম্ভাব্য) - ৫০২ মার্কিন ডলার, ২০১৩ জিডিপি পার ক্যাপিটা (সম্ভাব্য) - ৬৪৯ মার্কিন ডলার।
পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরে সবচেয়ে দরিদ্র দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মোজাম্বিক। ২০১১ সালে একাধিক প্রাকৃতিক গ্যাসফিল্ড আবিষ্কার হওয়ার পর অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ এক সম্ভাবনার মধ্যে ছিল সাবেক এই পর্তুগিজ কলোনি। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে আরও একটি মেগাপ্রজেক্টে হাত দিতে যাচ্ছে আফ্রিকার এই দেশটি। আর তা হলো- ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তিতে দেশটির বিশাল পরিমাণের গ্যাস আহরণ করা হবে। তাতে হয়তো এখানকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকায় গতির হাওয়া বইতে পারে।
কিন্তু গ্যাস বিক্রির অর্থে মোজাম্বিকের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সূচক বাড়লেও এখানকার স্থানীদের দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাসক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে বিদেশিদের। যে কারণে দেশীয়দের কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত বেকারত্বের হার বাড়ছে। গেল জুন পর্যন্ত মোজাম্বিকের ৩৫ বছর কিংবা তার কম বয়সী জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই বেকার বলে জানা যায়।
উগান্ডা: ২০১৭ জিডিপি পার ক্যাপিটা - ৭২৬ মার্কিন ডলার, ২০১৯ জিডিপি পার ক্যাপিটা (সম্ভাব্য) - ৭৫৯ মার্কিন ডলার, ২০১৩ জিডিপি পার ক্যাপিটা (সম্ভাব্য) - ৯৫৯ মার্কিন ডলার।
আসছে বছরে উগান্ডার জিডিপি পার ক্যাপিটা বাড়তে পারে ৩৩ মার্কিন ডলার। বিভিন্ন অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দরিদ্র দেশ হিসেবে চলতি ২০১৮ সালে উগান্ডার অবস্থান তিন নম্বরে। অর্থনৈতিক ইস্যুতে উগান্ডা এক অদ্ভুত দেশ।
১৯৮৬ সালের সশস্ত্র দ্বন্দ্ব অবসানের পর ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল রেজিস্টেন্স মুভমেন্ট (এনআরএম) দেশটিকে দারিদ্র্যের করাল থাবা থেকে বের করে আনার জন্য বেশ কিছু প্রশংসনীয় সফল উদ্যোগ নিয়েছিল। তাদের সেসব উদ্যোগের বাস্তবায়নের সুফল হিসেবে ২০১০ সালের মধ্যে উগান্ডায় জাদুকরী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়। বিশেষ করে গেল পাঁচ বছরে শুধু দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই বাড়ছে না, নামছে দরিদ্রতার হার।
তারপরও উগান্ডার দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বের হতে না পারার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন- এখানকার রুক্ষ আবহাওয়া, বেসরকারী খাতের উন্নতিতে সরকারি ঋণ সুবিধার প্রতিকূলতা, সরকারি উদ্যোগের অপব্যবহার প্রভৃতি।
সবচেয়ে বড় কারণ হলো প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ সুদান, যেখানকার অস্থির রাজনৈতিক অবস্থা, গৃহযুদ্ধের কারণে সে দেশের লাখো সাধারণ মানুষ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিচ্ছে উগান্ডায়।
যে কারণে উগান্ডার রপ্তানি কমে যাচ্ছে, হারাতে হচ্ছে বৈদেশিক উপার্জন। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, যদি উগান্ডা বড় ধরনের বিনিয়োগ পায়, তাহলে স্থানীয় ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীল হবে, বাজেট ও কেন্দ্রীয় খরচ কম যাবে। এর সবকিছুই আবারও উগান্ডার দরিদ্রতার হার কমিয়ে দিতে পারে। সৌভাগ্যবশত, ২০১৭ সাল থেকে উগান্ডায় বিনিয়োগ বাড়ছে, যা তাদেরকে নিকট ভবিষ্যতে দারিদ্র্য কমানো এবং প্রবৃদ্ধির সূচক উপরের দিকে নেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
তাজিকিস্তান: ২০১৭ জিডিপি পার ক্যাপিটা - ৭৭৭ মার্কিন ডলার। ২০১৯ জিডিপি পার ক্যাপিটা (সম্ভাব্য) - ৮৬১ মার্কিন ডলার। ২০২৩ জিডিপি পার ক্যাপিটা (সম্ভাব্য) - ১১৫৯ মার্কিন ডলার।
এ বছর সবচেয়ে গরীব দেশের তালিকায় চার নম্বরে অবস্থান করছে তাজিকিস্তান। ২০১৯ সালে তাদের সম্ভাব্য জিডিপি পার ক্যাপিটা হতে পারে ৮৬১ মার্কিন ডলার। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর স্বাধীনতা লাভ করে তাজিকিস্তান। যদিও এই স্বাধীনতা লাভের পরপরই গৃহযুদ্ধ শুরু হয় দেশটিতে, যা পাঁচ বছর পর ১৯৭৭ সালে শেষ হয়।
তখন থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, পাশাপাশি বিদেশি সাহায্যও মিলছে, যা দারুণভাবে দেশটির দারিদ্র্য নিধনের মাধ্যমে উন্নতির সূচক বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে দেশটিতে দারিদ্র্যের হার ৮৩% থেকে ৪৭% এ নেমে এসেছে। এরপর ২০১২ তা নেমে আসে ৩৭% এ। ২০১৬ সালে গিয়ে এ হার নেমে হয় ৩০%। ২০১৯ সালের মধ্যে সম্ভাব্য দারিদ্র্যের হার হতে পারে শতকরা ২৫ শতাংশ।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৯ সালে তাজিকিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা আরও উন্নত হবে। বলে রাখা ভালো, দেশটির অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক অর্থ। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার শ্রমবাজারে তাজিকিস্তানের শ্রমিকরা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। যে কারণে দেশটির অর্থনীতির পালে নতুন হাওয়া লেগেছে।
শুধু তা-ই নয়, এখানকার বেসরকারি খাতেও উন্নতি ছোঁয়া লেগেছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০১৯ অর্থবছরে তাজিকিস্তানের অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধি হবে ৫.৭ শতাংশে। ২০২০ সালে তা আবার নেমে যেতে পারে ৫.৪ শতাংশে। অর্থাৎ, ২০১৯ সাল তাজিকিস্তানের জন্য অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর হতে যাচ্ছে।
ইয়েমেন: ২০১৬ জিডিপি পার ক্যাপিটা - ৭৬২ মার্কিন ডলার। ২০১৯ জিডিপি পার ক্যাপিটা (সম্ভাব্য) - ৯১৩ মার্কিন ডলার। ২০২৩ পার ক্যাপিটা (সম্ভাব্য) - ১০৭৯ মার্কিন ডলার।
ইয়েমেন বড় ধরনের গৃহযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে দেশটিতে মানবিক সংকটও সবচেয়ে বেশি। সবকিছু মিলিয়েই বিশ্বব্যাপী গরীব দেশের তালিকায় ইয়েমেনের নাম কীভাবে আসলো তা ব্যাখ্যা করাটা অনেক কঠিন ব্যাপার।
বলা হচ্ছে, ২০১৯ অর্থবছরে দেশটির মাথাপিছু জিডিপি হতে পারে ৯১৩ মার্কিন ডলার। দেশব্যাপী সাধারণ নাগরিক সুবিধা হাতের নাগালের হাজার মাইল বাইরে। সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বাস করছে ইয়েমেনের প্রায় প্রায় অর্ধেক জনগণ। এছাড়া লাখ লাখ মানুষকে নিজেদের জায়গা থেকে জোর করে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, এই মুহূর্তে ইয়েমেনে চরম দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ১৪ মিলিয়ন মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে আছে। শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়ে গেলে সেপ্টেম্বর থেকে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ বেড়েই চলেছে।
সম্প্রতি সৌদি আরব তাদের রাজকোষ থেকে ইয়েমেন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে, যাতে সেখানকার মানুষের জীবনযাপনের মানের উন্নতি হয়। উল্লেখ্য, সাড়ে তিন বছরের গৃহযুদ্ধে ছয় বছরে প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে ইয়েমেনের অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। -roar.media
এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ৮ মে ২০১৯, ১১:৪৩ অপরাহ্ণ ১১:৪৩ অপরাহ্ণ
মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…
ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…
বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…