ইন্ডাস্ট্রিতে আমাকে সবাই ব্যবহার করেছে: নাসরিন

একটা সময় বাংলা সিনেমার আইটেম গান আর নাসরিন অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত ছিল। নাসরিনকে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকরা মূলত নৃত্যশিল্পী হিসেবে বেশি চিনেন। তবে দিলদারের সাথে জুটি গড়ে নাসরিন দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন।

তখন তাকে সবাই দিলদারের নায়িকা হিসেবে চিনতে শুরু করে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন তিনি। নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে চলচ্চিত্রে এলেও পার্শ্ব চরিত্রেই তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। মনের মধ্যে থেকে গেছে নায়িকা না হতে পারার আক্ষেপ।

৫০০শ’ অধিক সিনেমায় অভিনয় করা নাসরিনের চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে ১৯৯২ সালে নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে। ছোট ছোট চরিত্র থেকে শুরু করে সব চরিত্রেই কাজ করেছেন তিনি। সেই ১২ বছর বয়স থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত নাসরিন।

এত বছর ধরে অভিনয় করলেও নিজের কোন অবস্থান তৈরি করতে পারেন নি। আর এর কারণ হিসেবে অন্যান্য নায়িকাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাসরিন। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজের জীবনের গল্প তুলে ধরেন এই অভিনেত্রী।

নাসরিন বলেন, অভিনয় জীবনে হয়তো অনেক কিছুই পেয়েছি আবার কিছুই পাই নি। যদি বলি যে অনেক কিছুই পাই নি তাহলে এর জন্য অনেক বড় নায়িকারা দায়ী। যেমন- মৌসুমী, শাবনূর তাদের জন্য আমি কাজ করতে পারতাম না।

আমি থাকলে অনেকে কাজ করতে চাইতো না। আমার ক্লোজ শট রাখতে দিত না। মেকআপ করে আমাকে একটু অন্যরকম করে দেওয়া হতো। তারপর লাইট কম দেওয়া হতো আমার দিকে। এসব করতেন ওই নায়িকারা। এগুলো যখন দেখতাম আমার অনেক কষ্ট লাগত। আমার সিকুয়েন্স রাখতো না। পারলে আমাকে বাদই দিয়ে দেয়। আমার সাথে অনেক অন্যায় করা হয়েছে।

তিনি বলেন, চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার আজকের যা অবস্থান তা আমার জন্য। আমি থাকলে সে কাজ করবে না ছবিতে। পরিচালকরা আমাকে বাদ দিয়ে দিত। আমার সাথে যদি এমন আচরণ না করতো তবে আমি হয়তো আজকে তাদের অবস্থানেই থাকতাম।

তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে রাজ্জাক সাহেবের একটি ছবিতে কাজ করার কথা ছিল আমার। সেটাতে বাপ্পারাজের নায়িকা ছিল কাজল। শুটিংয়ের সময় কাজলের বাবা মারা গিয়েছিল। সে বলেছিল সেদিনই ফেরত আসবে কিন্তু আস্তে একদিন দেরি হচ্ছিল।

তখন রাজ্জাক সাহেব আমাকে বলল বাপ্পারাজের নায়িকা হতে কিন্তু আমি হইনি। আমি ডলি জহুর ভাবিকে বললাম এমনিতেই মেয়েটার বাবা মারা গেছে একটা কষ্ট, আবার এসে যদি দেখে যে ছবিটাও নেই তাহলে আরও কষ্ট পাবে। তাই আমি ওটা করি নি। অন্য একটা ছোট চরিত্রে কাজ করেছি। যেটা কেউ করে না। কিন্তু অন্যান্য নায়িকারা আমার সাথে ঠিকই উল্টো আচরণ করেছে।

নাসরিন বলেন, একটা গানের শুটিং হবে ব্যাংককে যেটাতে চিত্রনায়ক রিয়াজের সাথে কেয়া ছিল। কেয়া নাচতে জানে না এই জন্য তাকে বাদ দিয়ে দিবে ছবি থেকে। তখন ডিপজল ভাই বলল তুই এই ছবির নায়িকা, কেয়া বাদ।

ছবিতে নায়ক দুজন রিয়াজ ভাই আর আমিন খান ভাই। তখন আমি কেয়াকে ডেকে এনে আমার সাথে নাচ দেখালাম, প্র্যাকটিস করালাম নৃত্য পরিচলক মাসুম বাবুলের সামনে। এরপর কেয়াকে বললাম যা কাজ কর। পরে ডিপজল ভাইকে বললাম কেয়া যদি কালকে সেখান থেকে ফেরত আসে তাহলে আমিই নায়িকা হবো। আমি তাদেরকে এভাবে হেল্প করতাম। কিন্তু আমাকে কোন দিন কেউ কোন হেল্প করে নি।

অল্প বয়সে নায়িকা হয়েছি উল্লেখ করে নাসরিন বলেন, আমি ছোট ছোট চরিত্র করে এসেছি। মাত্র ১২ বছর বয়সে নায়িকা হয়েছি। এতটুকু বয়সে কেউ নায়িকা হয় না। আর যারা এসেছে তারা নায়িকা হয়েই এসেছেন। তাদেরকে অনেকে সাপোর্ট দিয়েছে কিন্তু আমাকে তারা দেয়নি। একটা সময় দিলদার ভাইয়ের চোখে পড়ি। তারপর একসাথে কাজ করি।

এরপর থেকে সবাই আমাকে দিলদারের নায়িকা হিসেবে ট্রিট করতে লাগলো। যার কারণে পরিচালকরা আমাকে নায়িকা হিসেবে কাজে নিত না। আমার সাথে জুটি বেঁধে দিলদার ভাইয়ের জনপ্রিয়তা বেড়েছে কিন্তু আমার কিছুই হয় নি বরং আমার ক্যারিয়ার মাইনাস হয়েছে।

আমি রাস্তা ঘাটে বের হলে এখনও মানুষ আমাকে বলে দিলদারের নায়িকা যাচ্ছে, দিলদারের বউ যাচ্ছে। এটা আমার জন্য খুবই লজ্জাজনক। এখনও স্বামী নিয়ে বের হলে প্রতিনিয়ত তা শুনতে হয়। সত্যি কথা বলতে আমাকে সবাই ব্যবহার করেছে ইন্ডাস্ট্রিতে।

শেয়ার করুন: