নিজের হাতখরচের টাকায় দরিদ্রদের খাতা-কলম কিনে দেন ডুমুরিয়ার তাপস

তাপস কুমার রাহা। একজন সাধারণ মানুষ, আবার অনেকটাই অসাধারণ। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অনেক অসাধারণ মানুষের মাঝে তিনিও একজন। থাকেন খুলনা শহরসংলগ্ন ডুমুরিয়া বাজার এলাকায়।

কী এমন কাজ করেন তাপস কুমার রাহা? তবে তিনি যা করেন, তা হয়তো অনেকেই করেন না, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও। তিনি প্রতিদিন একজন দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র বা ছাত্রীকে এক মাসের জন্য তিনটি খাতা ও একটি কলম নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে কিনে দেন। শুধু তা-ই নয়, ওই শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার নিয়মিত খোঁজ-খবর নেন। এ ছাড়াও প্রয়োজনে কাউকে বই, স্কুল ব্যাগ, এমনকি স্কুলের পোশাকেরও ব্যবস্থা করে দেন তাপস কুমার রাহা।

এ বিষয়ে কথা হয় তাপস কুমার রাহার। তিনি বলেন, যে পয়সাটা একজন মানুষ প্রতিদিন 'হাতখরচ' এর নামে খরচ করেন, আমি সেটা করি না। ওই টাকাটা সঞ্চয় করে আমি সেটা এই উদ্দেশ্যে খরচ করি। আমি মাসে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে তিনটি করে খাতা ও একটি কলম কিনে দিই। এ ছাড়াও সাধ্যমতো শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আরো কিছু বিষয়ে আমি খরচ করার চেষ্টা করি।

ডুমুরিয়া বাজারে একটি ছোট বেকারি আছে তপন কুমার রাহার। স্ত্রী এবং চার বছরের পুত্রসন্তানকে নিয়ে পাশেই থাকেন। নিয়ম করে বছরে চারবার রক্ত দান করেন তিনি। তিনি বলেন, আমার ইচ্ছে ভবিষ্যতে আমার এই উদ্যোগের মাধ্যমে অন্তত ১০০ জন শিক্ষার্থীকে খাতা-কলম দেব।

এ বিষয়ে কথা হয় ডুমুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়ার সাথে। সে জানায়, সপ্তম শ্রেণি থেকে সে তাপসের দেওয়া খাতা-কলম পায়। এ ছাড়াও তিনি মেয়েটির ছোট ভাই পঞ্চম শ্রেণির হাবিবকেও নিয়মিত খাতা ও কলম দিয়ে আসছেন। খাতা ও কলমের বাইরে তাপস এই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় বই ও স্কুল ব্যাগও কিনে দিয়েছেন।

প্রায় চার বছর হলো এ কাজ করছেন তাপস কুমার রাহা। মৃত্যু পর্যন্ত এ কাজ চালিয়ে যেতে চান তিনি। বলেন, আমি খুব সাধারণ মানুষ ভাই। আমার সাধ্যও সীমিত। তবে আমার ইচ্ছাটা অনেক বড়। আমি বড় কিছু করতে চাই। তবে প্রচারের আলোয় আসতে চাই না। আমি শুধু চাই, আমাকে দেখে আমার মতো এমন আরো অনেকে এগিয়ে আসুক। আমি-আমরা পারব, কেননা মানুষই তো পারে।

টেলিফোনের ওপাশে দৃঢ় কণ্ঠে এসব বলেন তাপস কুমার রাহা। ঢাকা থেকে অনেক দূরে একটি ছোট বেকারির চেয়ারে বসে থাকা মানুষটির চোখ তখন স্বপ্নে ভরে ওঠে। আপনার জন্য শুভ কামনা, তাপস কুমার রাহা।

শেয়ার করুন: