এ দেশের শোবিজের শোক যেন কাটছেই না। একের পর এক গুণী মানুষেরা চলে যাচ্ছেন সমৃদ্ধ আঙিনাকে অসহায় করে দিয়ে। চলতি বছরে সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ, অভিনেতা টেলি সামাদের পর মঙ্গলবার (৭ মে) চলে গেলেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম রোজার ইফতারের পরপরই ছড়িয়ে পড়ে বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর গুজব। এই খবরে সাংবাদিকদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়। অনেকেই ফোন দিয়ে এ প্রতিবেদকের কাছেও গুণী এই অভিনেতার মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চান।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে কোনো সত্যতা পাওয়া গেল না। আবার খবরটিকে উড়িয়ে দেয়ার মতো সূত্রও মেলেনি। কোনো এক কারণে এটিএম শামসুজ্জামানের ব্যাপারে মুখ খুলছে না তার পরিবার ও তার চিকিৎসা চলতে থাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বারবার এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ভাই শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের পরিচালক আলহাজ সালেহ জামান সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এটিএম শামসুজ্জামান। সেখানে যোগাযোগ করা হলেও কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সূত্রেও একুশে পদকজয়ী এই অভিনেতার শারীরিক কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি।
এদিকে সোমবার সকাল থেকেই কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তাই তাকে সেদিন সকাল ১০টায় দ্বিতীয়বারের মতো লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই বিষয়টি নিশ্চিত করে সোমবার অভিনেতার ছোট ভাই সেলিম বলেন, ‘ভাইয়ের শরীর আবার খারাপ করেছে। বেশকিছু ঝামেলা দেখা দিয়েছে। সে জন্য চিকিৎসক আবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সবাই দোয়া করবেন উনার জন্য।’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। হঠাৎ অসুস্থবোধ করায় গত ২৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এই অভিনেতাকে। ওইদিন এটিএম শামসুজ্জামানকে স্যালাইন দেয়া হয়। তখন হঠাৎ করে তার মলত্যাগে জটিলতা দেখা দেয়।
এ জন্য গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে জরুরি ভিত্তিতে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার সফলভাবে শেষ হয় তার। ২৮ এপ্রিল সকালে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ৩০ এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এদিন বেলা ৩টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এরপর অবস্থা কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গত ৩ মে শুক্রবার সকালে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হয়। রাখা হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণে। শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে এটিএম শামসুজ্জামানের চিকিৎসা তত্ত্বাবধানকারী ডা. রবিউল আলীম এই তথ্যই নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু আবারও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বর্তমানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এটিএম শামসুজ্জামান অভিনয়ে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এবং নির্মাতাও।