৭ বার নির্বাচন করে জয় পেলেন শীতল সরকার

অবশেষে ময়মনসিংহ প্রথম সিটি নির্বাচনের কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন শীতল সরকার। গত রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে তিনি ৬০২ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩৩ ওর্য়াডেই কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে শীতল সরকারের জয়ী হওয়ার পেছনে রয়েছে অন্যরকম এক গল্প । কারণ দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন মোট ৭ বার।

কিন্তু বার বার তিনি কালো টাকা ও পেশী শক্তির কাছে হেরে যান। এই নির্বাচনের পিছনে সময় দিতে গিয়ে হারিয়েছে নিজের সোনালি যৌবন, খুইয়েছেন টাকা-পয়সা। হারিয়েছেন স্ত্রী-সন্তানকেও।

এ সম্পর্কে শীতল সরকার বলেন, ‘মানুষের চোখের জল আর অকৃত্রিম ভালোবাসাই আমার প্রেরণা ও বারবার নির্বাচন করার মূল শক্তি। বারবার হারার পরেও এলাকার মানুষকে ছেড়ে যাইনি। তাই আমি কখনোই পরাজিত ছিলাম না।

আমি জয়ের জন্য লড়ে গেছি, শত প্রতিকুলতার মধ্যেও আমার সমর্থকরা আমাকে তাদের ভালোবাসা দিয়ে নির্বাচনের মাঠে রেখে দিয়েছে। মূলত আমার ভোটার এবং সমর্থকরাই আমার থেকে বেশি ত্যাগ শিকার করেছে ও তারাই বেশি ধৈর্যশীল ছিলো । তারা একটা জয়ের জন্য অনেক বেশি ধৈর্য্য ধরেছেন এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন।’

শীতল সরকারের জয়ী হওয়ার গল্পটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল। স্ট্যাটাসের পর স্ট্যাটাস হচ্ছে ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে। মন্তব্যে লাইনগুলোও দীর্ঘ হচ্ছে। এলাকাবাসীও জানালেন শীতল সরকার সম্পর্কে।

ময়মনসিংহ শহরের ১৮০নং কালিবাড়ী রোডের বাসায় ১৯৫৬ সালের ১৬ জানুয়ারী শীতল সরকারের জন্ম। ১৯৮১ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তৎকালীন ময়মনসিংহ পৌরসভার নির্বাচনে কমিশনার পদে নির্বাচন শুরু করেন শীতল সরকার। দীর্ঘ ৩৮ বছরে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ৭ বার।

১৯৯৮ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ি লক্ষী সরকাররের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন শীতল সরকার। বিয়ের কিছুদিন পরই তিনি পৌরসভার কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে হেরে যায়।

একাধিকবার নির্বাচনে অংশগ্রহন ও হেরে যাওয়া নিয়ে সংসারে শুরু হয় অশান্তি। রাগে ক্ষোভে শীতল সরকারের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বাবার বাড়ী চলে যায় । এরপর তিনি আর স্বামীর সংসারে ফিরে আসেননি।

৩৮ বছরের সাধনার পর নির্বাচনে শীতল সরকারের বিজয়ে খুশি ওর্য়াডবাসী, সেই সাথে খুশি পুরো নগরের হাজারো মানুষ। সেই খুশিতে অনেকেই মিষ্টি ও ফুল নিয়ে দেখা করছেন শীতল সরকারের সাথে। তুলছেন ছবি, আপলোড দিচ্ছেন ফেসবুকে |

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বাসিন্দা অরবিন্দ পাল অখিল বলেন, আমি ভোটার না হলেও শীতল দাদার জন্য ৯ নং ওর্য়াডের আমার আত্মীয়দের কাছে ভোট চেয়েছি।ি তার বিজয়ে আমি অনেক খুশি |

সিটির ৯ নং ওর্য়াডের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী দুলাল ভূইয়া জানান, আমার যৌবনকালে আমি শীতল সরকারের পক্ষে নির্বাচন করেছি। তবে তাকে বিজয়ী করতে পারিনি | কিন্তু দীর্ঘ ৩৮ বছর পর আমার নাতি তার সমর্থক হিসেবে নির্বাচন করে তাকে বিজয়ী করায় আমি আনন্দিত |

টেইলার্স ব্যবসায়ী চন্দন দে জানান, আমরা তাকে বিজয়ী করতে পেরে দায় মুক্তি হয়েছি | কারন দীর্ঘ ৩৮ বছর তিনি এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছেন। এলাকাবসীর কাছে এই ভোট ছিলো শীতল সরকারের দাবি |

সংশ্লিষ্ট ওর্য়াডের ভোটার নজরু ইসলাম বলেন, বিনয়ী, সৎ, যোগ্য, ও অর্থবিত্তহীন পরোপকারী শীতল সরকারকে এলাকবাসী একাধিক সময় ভোট দিয়েছে। কিন্তু কালো টাকা ও পেশী শক্তির কাছে তিনি বারবার হেরে গেছেন |

শীতল সরকারের সমর্থক বিলাস সরকার জানান, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রলোভন ও হুমকি উপেক্ষা করে নিজেরা টাকা সংগ্রহ করে নির্বাচনে ব্যয় করেছি।

শীতল সরকারের বিজয়ে শুধু ভোটারাই খুশি হননি, খুশি হয়েছে এলাকার ভোটার না হওয়া কিশোর-তরুনরাও। তার বিজয়ের খবরে নিজেরা চাঁদা তুলে বাজার থেকে নির্বাচনী প্রতীক মিষ্টি কুমড়া কিনে আনন্দ মিছিল করেছে। এমনকি নির্বাচনে বিনা খরচে শীতল সরকারের পক্ষে প্রচার প্রচারনায় অংশ নিয়েছে।

এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, অতীতের ন্যায় শীতল সরকার এলাকার মানুষের পাশে থেকে উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাবে। শীতল সরকার বলেন, দীর্ঘ সময় মানুষের পাশে আছি। এলাকার ভোটারাই আমার আত্মীয় স্বজন ও সংসারের নিজের মানুষের মতো।

বারবার পরাজিত হয়েও এলাকাবাসীর সাথে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে ৯ নং ওর্য়াডকে একটি আধুনিক ওর্য়াডে রূপান্তরিত করবো।

শেয়ার করুন: