যে কারণে ২০-দলীয় জোট ছাড়লেন পার্থ

বিএনপির সঙ্গে ২০ বছর ধরে চলা রাজনৈতিক সঙ্গ ছিন্ন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ সোমবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জোটছাড়ার বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি বিজেপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জোটছাড়ার নেপথ্য কারণ জানা গেছে।

১৯৯৯ সাল থেকে বিএনপির জোটসঙ্গী বিজেপি। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট যখন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম, তখন ঐক্য টিকিয়ে রাখার মুখ্য ভূমিকা রাখেন বিজেপির বর্তমান চেয়ারম্যান পার্থের বাবা নাজিউর রহমান মঞ্জুর।

পরে তিনি মারা যাওয়ার পর পার্থ দলের চেয়ারম্যান হন। তিনি বিএনপির সঙ্গে কাধে কাধ মিলিয়ে রাজনীতি করেন। বিএনপির চরম সংকটময় মুহূর্তেও পার্থ জোট ছাড়েননি।

কিন্তু এবার দীর্ঘদিনের মান-অভিমান থেকে বিএনপি জোটছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন পার্থ। বিজেপির ২০-দলীয় জোটছাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ জানা গেছে।

প্রথমত পার্থ মনে করছেন বিএনপির রাজনীতি এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টমুখী, যে কারণে বিএনপিতে ২০ দলের গুরুত্ব কমে গেছে। দ্বিতীয়ত ২০ দলকে অন্ধকারে রেখে জোটের প্রধান শরিক বিএনপির এমপিদের শপথগ্রহণ। তৃতীয়ত দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। চতুর্থত: বিএনপির সঙ্গে সৃষ্টি হওয়া ২০ দলের শীর্ষ নেতাদের টানাপোড়েন।

বিএনপি জোটের সঙ্গ ছিন্ন করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, বিএনপির রাজনীতি ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে পড়েছে। ২০ দলের গুরুত্ব তাদের কাছে আছে বলে মনে হচ্ছে না। যেখানে আমাদের গুরুত্বই থাকছে না সেখানে আমাদের থেকে লাভ কী?

তিনি বলেন, আমরা জোট থেকে বেরিয়ে এসেছি। নতুন কোনো জোটে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। আমরা স্বতন্ত্রভাবে এখন দল গোছানোর কাছ শুরু করব।

দলটির মহাসচিব আবদুল মতিন সাউদ বলেন, ২০-দলীয় জোটের শরিক হলেও বিভিন্ন সিদ্ধান্তে বিএনপি আমাদের পাশ কাটিয়ে গেছে। জোটের চেয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দিকেই তারা বেশি মনোযোগী।

বিএনপি সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অথচ তারা সংসদে গেল। কিন্তু এ বিষয়ে ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে কোনো আলোচনাও হয়নি। অথচ আমরা জোটবদ্ধভাবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। এসব অবহেলার কারণে জোটছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এর আগে সোমবার জোটছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজেপি ১৯৯৯ সাল থেকে চারদলীয় জোটে এবং পরবর্তী সময় ২০-দলীয় জোটে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর থেকে ২০-দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্রমশই স্থবির হয়ে পড়ে।

বিরোধীদলীয় রাজনীতি অতিমাত্রায় ঐক্যফ্রন্টমুখী হওয়ায় ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে এবং পরে সরকারের সঙ্গে সংলাপসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ২০-দলীয় জোটের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দলের সম্পৃক্ততা ছিল না। কেবল সংহতি ও সহমত পোষণের নিমিত্তে ২০-দলীয় জোটের সভা ডাকা হতো।

বিজেপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ২০-দলীয় জোটের সবার সম্মতিক্রমে এ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করা হয়।

কিন্তু পরে প্রথমে ঐক্যফ্রন্টের দুজন এবং বিএনপির চারজন (পাঁচজন হবে) সংসদ সদস্য শপথ নেয়ায় দেশবাসীর মতো বিজেপিও অবাক ও হতবাক। শপথ নেয়ার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিএনপি ছাড়া ২০-দলের অন্য কোনো দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজেপি মনে করে, এই শপথের মাধ্যমে বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। এমতাবস্থায় ২০-দলীয় জোটের বিদ্যমান রাজনীতি পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিজেপি ২০-দলীয় জোটের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসছে।

বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা নাজিউর রহমান মঞ্জু ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে চারদলীয় জোটের শরিক হিসেবে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হন। তার মৃত্যুর পর ২০০৪ সালে দলের দায়িত্ব নেন তার ছেলে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। এ ছাড়া ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন আন্দালিব রহমান পার্থ। একজন তরুণ এমপি হিসেবে সংসদে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন পার্থ।

বিএনপির শরিক হিসেবে পথচলা অব্যাহত রেখে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

শেয়ার করুন: