গাছপালায় ঘেরা বন অনেকেরই পছন্দের। এ কারণে নিরিবিলিতে রোমাঞ্চকর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে অনেকেই বনে ঘুরতে যান। প্রায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা জাপানের একটি বনও অনেকের পছন্দের। তবে রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে নয়, এই বনটি অনেকে পছন্দ করেন জীবন শেষ করে দিতে।
রহস্যে ঘেরা এই বনটির নাম য়োকিগাহারা। জাপানের ফুজি পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমে বিশাল এলাকা জুড়ে এটি বিস্তৃত। এই বনে এ পর্যন্ত কত মানুষ মারা গেছে তার সঠিক কোনো হিসেব নেই। তবে ধারণা করা হয়, প্রতি বছর এখানে গড়ে ১০০ মানুষ আত্মহত্যা করেন। আবার এটাও জানা গেছে, আত্মহত্যা করতে আসা অনেকে এই বনে কিছুদিন ক্যাম্প করে থাকেন। এই সময় তারা চিন্তা করেন এখানে আত্মহত্যা করা যাবে কি না।
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে এই বনে। এই বনে কেন মানুষ আত্মহত্যা করতে আসে তা নিয়ে অনেক ধরনের গল্প চালু আছে। অনেকের মতে, ১৯৬০ সালে সেইকো মাটসুমোটো নামের এক জাপানি লেখকের দুটি উপন্যাস ‘টাওয়ার অফ ওয়েবস’ ও ‘লিট’ প্রকাশের পর থেকেই এই অঞ্চলে এসে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে যায়।
এই উপন্যাসের দুটি চরিত্র পরিবার ও সন্তানের শুভ কামণায় এই বনে এসে আত্মহত্যা করেছিল। ধারণা করা হয়, উপন্যাসের সেই চরিত্র দুটি স্থানীয় মানুষকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে তারাও পরিবারের মঙ্গল কামনায় এখানে এসে আত্মহত্যা করেন।
ঐতিহাসিকদের মতে, উনবিংশ শতাব্দীতে এই এলাকায় ‘উবাসুতে’ নামে এক বিচিত্র রীতি প্রচলিত ছিল। এই রীতি অনুযায়ী মৃত্যু পথযাত্রী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এই জঙ্গলে এসে ছেড়ে চলে যেতেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। এর পর এখানেই মৃত্যু হত তাদের। অনেকের বিশ্বাস, এই জঙ্গলে মৃত ব্যক্তির আত্মারা ঘুরে বেড়ায়। কোনও জীবিত ব্যক্তি এখানে এলে ওই আত্মারাই তাকে আত্মহত্যায় প্রভাবিত করে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, যারা এই বনে আত্মহত্যা করতে আসেন তারা মনে করেন এখানে মারা গেলে সফলভাবেই তাদের কাজটি করতে পারেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, গণমাধ্যম ও সিনেমাতে এই বনে আত্মহত্যার বিষয়টি এত বেশি প্রচার করার কারণে অনেকে এই বনেই আত্মহত্যা করতে আকৃষ্ট হচ্ছেন। মানুষ যাতে এই বনে এসে আত্মহত্যা না করে এ কারণে স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে বনে ঢোকার মুখে একটা সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। সেখানে লেখা আছে, ‘আত্মহত্যা করার আগে নিজের সন্তান এবং পরিবারের কথা ভাবুন।
পিতা-মাতার জন্য আপনার জীবন অমূল্য সম্পদ।’ এখানে এসে যাতে কেউ আত্মহত্যা করতে না পারে এ কারণে স্থানীয় প্রশাসণ অনেক স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বনে আগতদের আত্মহত্যার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতে। বনের প্রবেশ মুখে পুলিশ পাহাড়াও আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে।
স্থানীয় এক প্রসাশনিক কর্মকর্তা ওটানাবি বলেন, ‘বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে মার্চ মাসে এই বনে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে যায় মন্দা অর্থনীতির কারণে’। তিনি জানান, এই বনে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে তারা নানাভাবে চেষ্টা করছেন। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সব আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।