মো. শাহীন মিয়া (২৫) জন্ম অন্ধ হয়েও ৩০ পারা কোরআনে হাফেজ হয়েছেন। তিনি হাফেজ হলেও দরিদ্র হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কোন দিন খেয়ে আবার কোন দিন না খেয়ে চলছে তার সংসার। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ৮ নং ভাদগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল দক্ষিনপাড়া গ্রামে তার বাড়ি।
শনিবার জন্ম অন্ধ কোরআনের হাফেজ মো. শাহীন মিয়া তার পরিবারের অভাব অনটন ও দারিদ্রতার কথা এই প্রতিনিধির কাছে তুলে ধরেন।
তিনি জানান, তার বাবার নাম মো. সাইজুদ্দিন মিয়া এবং মার নাম বিমলা বেগম। একটি ছেলে সন্তানের আশায় বিমলার ঘরে একে একে ৫ মেয়ে জন্ম হয়। সব শেষে জন্ম হয় শাহীনের। তাও আবার অন্ধ হয়ে। অন্ধ ছেলে সন্তান এবং ৫ মেয়েকে নিয়ে চরম বিপাকে পরেন দরিদ্র ও অসহায় সাইজুদ্দিন এবং বিমলা বেগম।
সাইজুদ্দিন দিন মজুরের কাজ এবং বিমলা বেগম গৃহিণীর কাজ করে ৫ মেয়ে ও এক অন্ধ ছেলেকে মানুষ করতে জীবন যুদ্ধে নামেন। বাড়ি বাড়ি কাজ করে অন্ধ ছেলেকে বিভিন্ন মাদ্রাসায় নিয়ে কোরআন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেন। অন্ধ হয়েও মনের জোর থাকায় কোরআন শিক্ষা থেকে পিছিয়ে যাননি শাহীন। বাবা-মায়ের অক্লান্ত শ্রমে শাহীন অবশেষে কোরআনের হাফেজ হন। এলাকার লোকজনও তাকে বেশ সহযোগিতা করেন।
এদিকে গত কয়েক বছর হলো শাহীন বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রীর নাম ইতি আক্তার। তাদের সংসারে এক কন্যা সন্তান হয়েছে। অন্ধ স্বামীর অভাবের সংসার এবং এক শিশু কন্যাকে লালন পালন করার জন্য ইতি আক্তার পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ নিয়েছেন। এক দিকে সংসারের ঘানি, অপর দিকে অন্ধ স্বামী ও শিশু কন্যাকে নিয়ে চরম হতাশায় পরেছেন ইতি আক্তার।
এ ব্যাপারে হাফেজ শাহীন মিয়া বলেন, জন্মের পর থেকে কষ্টই করে গেলাম। বাবা-মা আমাকে অনেক কষ্ট করে কোরআনের হাফেজ করেছেন। কিন্তু তাদের কোন সহায়তা করতে পারছি না। আমার একটি কন্যা সন্তান, স্ত্রীসহ ও বাবা-মাকে নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছি। সবার একটু সাহায্য ও সহযোগিতা পেলে তাদের নিয়ে দু’বেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারি।
তিনি প্রধানমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, স্থানীয় এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ দেশ ও বিদেশের বৃত্তবানদের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ৮ নং ভাদগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজাহরুল ইসলাম আজাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নের গোড়াইল দক্ষিনপাড়া গ্রামে জন্ম অন্ধ মো. শাহীন মিয়ার অভাব অনটনের কথা আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। তিনি কোন সাহায্য সহযোগিতা পান কিনা আমার জানা নেই। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর নিয়ে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।