যাকাত থেকেই আসতে পারে ৩০ হাজার কোটি টাকা

দেশে বর্তমানে অর্থনীতির যে আকার এতে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি যাকাত আদায় করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই যাকাত ঠিকভাবে আদায় করার পর তা সুষ্ঠুভাবে বল্টন করতে পারলে দেশে কোনো গরিব থাকবে না বলেও জানান তারা। বর্তমানে যাকাত ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই দেশে বৈষম্য বাড়ছে। মুসলিম বিশ্বে বর্তমানে যে ক্ষুধা-দারিদ্রতা বিরাজ করছে, তা কেবল যাকাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর করা সম্ভব।

শনিবার (৪ মে) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব মতামত দেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলনে, যাকাত ব্যবস্থপনার দুর্বলতার কারণেই দেশে বৈষম্য বাড়ছে। মুসলিম বিশ্বে বর্তমানে যে ক্ষুধা-দারিদ্র্য বিরাজ করছে, যাকাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা দূর করা সম্ভব। দেশে অর্থনীতির যে আকার, তাতে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি যাকাত আদায় সম্ভব।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দেশে আয়বৈষম্য নিরসন ও দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাতের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ওপর গুরত্ব দেন। তিনি বলেন, বর্তমানে যেভাবে যাকাত দেওয়া হয়, তাতে গ্রহীতা সাময়িকভাবে উপকৃত হয়, কিন্তু তা টেকসই হয় না। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যাকাত আদায় ও বিতরণ করলে দারিদ্র্য বিমোচন টেকসই হবে। কর ব্যবস্থাপনায় যাকাতকে প্রাধিকার দেওয়া যায় কিনা, তা বিবেচনা করতেও সরকারকে অনুরোধ করেন তিনি।

মূল প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি যাকাত ওঠানোর সক্ষমতা থাকলেও সরকারি সংস্থা যাকাত বোর্ড আদায় করছে মাত্র কয়েক কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যক্তি বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিচ্ছিন্নভাবে যাকাতের অর্থ বিতরণ করছে। বিচ্ছিন্নভাবে যাকাত বিতরণ হওয়ার কারণে দারিদ্র্য বিমোচন ও আয়বৈষম্য কমাতে যাকাত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ অবস্থায় যাকাতের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে রিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। কিন্তু বিশাল একটা অংশ যাকাতের বিষয়ে সচেতন নয়। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে দ্রুত ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা একদিকে ভালো। অন্যদিকে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় যাকাতের বাইরে আরো বেশি অর্থ সহায়তা নিয়ে ধনীদের এগিয়ে আসতে হবে।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে আয়বৈষম্য ও দারিদ্র্য এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ ক্ষেত্রে যাকাতের ভূমিকা খুব নগণ্য। ব্যক্তিগতভাবে এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো এককভাবে যাকাত দিচ্ছে। এতে সাময়িকভাবে দরিদ্র মানুষের উপকার হয়। কিন্তু টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে না। অথচ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাকাত সংগ্রহ করে আয়বর্ধক কাজে দরিদ্র মানুষকে যুক্ত করা গেলে দারিদ্র্য বিমোচন সহজ হতো।

সাবেক মন্ত্রী নূর উদ্দিন খান বলেন, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা কঠিন। ক্ষুদ্রঋণের কারণে মানুষ দারিদ্র্যের জালে আটকা পড়ছে। এ ক্ষেত্রে যাকাতের অর্থ দারিদ্র্য বিমোচনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশকে সুদমুক্ত করতে যাকাতের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

আয়বৈষম্য নিরসনে কর আর যাকাতের তুলনামূলক অবদান তুলে ধরে সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, কর ধনী-গরিব সবার কাছ থেকেই আদায় করা হয়। কিন্তু সুফল সবাই সমানভাবে পায় না। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। যাকাত ধনীরা দেয়, আর গরিবরা তার সুফল পায়। তাই দারিদ্র্য বিমোচনে করের চেয়ে যাকাতকে অধিকতর কার্যকর পন্থা বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান কর ব্যবস্থাপনায় দরিদ্র মানুষকে অনেক বেশি পরোক্ষ কর দিতে হচ্ছে। এ কারণে কর ব্যবস্থাপনা আরো আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। আধুনিক কর ব্যবস্থাপনা এবং যাকাতের সমন্বয়ে সফলভাবে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে।

ইসলামী ব্যাংক কনসালটেটিভ ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল বলেন, বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ মানুষ যাকাত দিতে পারে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যাকাত দিচ্ছে। এক্সিম ব্যাংক প্রতিবছর ৩০ কোটি টাকা যাকাত দিচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক দিচ্ছে ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো কেন্দ্রীয়ভাবে যাকাত ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। যাকাতের অর্থ সঠিকভাবে এবং আয়বর্ধক প্রকল্পে ব্যবহার করতে হলে কেন্দ্রীয়ভাবে যাকাত ব্যবস্থাপনা জরুরি হয়ে পড়েছে।

শেয়ার করুন: