বিশ্বের সবচেয়ে দূর্যোগ প্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এরই মাঝে জাতিসংঘ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে, ‘ওয়ার্ল্ড রিস্ক রিপোর্ট’ শিরোনামের এই তালিকায় ওপরের দিকেই রয়েছে বাংলাদেশের নাম। তা মূলত ভৌগলিক কারণেই বলে মত দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের মানচিত্রটি যদি ভালো করে দেখা যায়, সহসাই বুঝতে পারা যাবে, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। ভূখণ্ডের প্রায় তিন পাশেই উঁচু ভূমি আর আমরা সমতল নিচু ভূমি। ভৌগলিক কারণেই বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ। আরও কিছুটা পিছনে গেলে দেখা যাবে, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় ভারতীয় আর বৃটিশ বিশেষজ্ঞগণ অনুমান করতে পেরেছিলেন এই ভূ-খণ্ডের ভবিষ্যৎ কী হবে। বাংলাদেশকে পানিতে ডুবিয়ে মারার এবং পানির অভাব তৈরী করার সামর্থ্য প্রাকৃতিক ভাবেই পেয়েছে ভারত।
ঘূর্ণিঝড় ফণী নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। যেহেতু ফণী বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে কেটে গেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ভারতে আঘাত হানা ফণীর ভয়াবহতার খবর এরই মধ্যে পৌঁছে বিশ্বের প্রতিটি কোনায়। আজ-কাল ভার্চুয়াল জগতের কারণে কোন কিছু লুকানোর অবকাশ নেই।
সব কিছু জানা যায় অনায়াসে। এরকম বহু ফণী বর্ষকালে আমাদের দেশে আসবে, তাই কিভাবে এসব দূর্যোগের মোকাবেলা করা যায় সে ব্যাপারে সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে দেশের পরিবেশবিদরা।
এদিকে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত বাংলাদেশে মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় ১৫৮২ সালের কথা উল্লেখ রয়েছে। সে সময় বরিশালের বাকেরগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় দু’লাখ মানুষ। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। সেসময় চট্টগ্রামে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১৩৮,০০০ মানুষ। গবাদি পশু ক্ষতি আজও নিরুপণ হয়নি, ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারের মতো।
ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ছয় মিটার, যা বেশ কিছু এলাকায় প্লাবন সৃষ্টি করে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় এক কোটি মানুষ ঘরছাড়া হয়। সেই ভয়াল ঘুর্ণিঝড়ের কথা ভুলতে বসলেও দৃশ্যমান সিডর, আইলার কথা আমাদের চোখের সামনে চলে আসে।
এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দেশের উপরের তলার মানুষরা ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও নিঃস্ব হয় সাধারণ মানুষ। তাই দেশ পরিচালনাকারীদের এসব প্রাকৃতিক দূর্যোগে মোকাবেলায় সব সময় প্রস্তুত থাকা উচিত বলে মনে করছে দেশের বিশিষ্টজনরা।
এ বিষয়ে পরিবেশবাদী মোজাম্মেল কবীর বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ড রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার তা কি ঠিকঠাক মত করছে সরকার? তাছাড়া উপকূলীয় বনায়ন প্রকল্পের অর্থ লুটপাট ও গাছ চুরির কারণে প্রতি বছর কমছে দেশের ঢাল হিসাবে পরিচিত সুন্দরবনের আয়তন।
প্রায়ই আমরা গণমাধ্যমে দেখি, পরিবেশ ও জলবায়ু তহবিলের টাকা লুটপাটসহ নানান অপকর্ম হচ্ছে বেশ হরহামেশাই। অথচ এই বিষয়ে আমাদের সরকারগুলোর বিশেষ কোন তৎপরতা দেখা যায় নি, এমনকি এই বিষয়ে সঠিক উপলব্দি সক্ষমতা আছে এমন লোক কোন সরকারের আমলেই দেখা যায়নি।
অথচ কী করছি আমরা? আমরা ঢাকা আর ঢাকার আশেপাশে লোক দেখানো উন্নয়নে লিপ্ত। ধর্মে ধর্মে, দলে দলে প্রতিহিংসা আর আক্রোশের রাজনীতির আড়ালে চাপা পড়ছে দেশের মূল সমস্যা। তবে এসব বিষয়ের উপর দ্রুত নজর না দিলে এর বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে বাংলাদেশকে।