ঘূর্ণিঝড় ফণী’র ১০ তথ্য!

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী বিগত ৪৩ বছরে বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করে দেওয়ার মতো একটি ঝড় যা ইতোমধ্যেই ১৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। শুক্রবার (৩ মে) ভারতের ওড়িশা ও পুরীতে আচড়ে পড়ে সে দেশেও প্রায় ৯জনের প্রাণ কেড়ে নেয় এই শক্তিশালী ঝড়টি।

এদিকে শনিবার ভোর ৪টা থেকেই আঘাত হানে বাংলাদেশে। তবে ভারতে প্রতিঘন্টায় ১৮৫ থেকে ২১০ কিলোমিটার বেড়ে ঝড়টি বয়ে গেলেও বাংলাদেশে অগ্রসর হওয়ার পরে তা ৫৫ থেকে ৮৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস ও ঝড়/ঝড়বৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য মতে, বর্তমানে ফণী বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের স্থলে (ঢাকা, মানিকগঞ্জ, চুড়াডাণ্ডা ও রাজবাড়ী) অঞ্চলে অবস্থান করছে। এটি আর ৫ ঘন্টা পর ঘূর্ণিঝড় হিসেবে থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। পরে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিক হয়ে ভারতের আসাম মেঘালয়ে প্রবেশ করবে। এর গতি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার।

যেহেতু এটি বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তার যাত্রাপথে যেসব এলাকা পড়বে সেখানে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি এবং বজ্রসহ বৃষ্টিও হতে পারে। তার সঙ্গে ভারী বর্ষণও হতে পারে বলেও জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ।

ইতিমধ্যে রংপুর, রাজশাহীতে ভারি বর্ষণ হয়েছে। সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ভারি বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃষ্টি থাকবে। এছাড়া দুপুরের পর থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

তবে যতখানি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল তার থেকে অনেকখানিই পরিত্রাণ মিলেছে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় ধীরে ধীরে বাতাসের গতিবেগ কমে আসছে এবং ঝড় মোকাবেলায় সরকারি উদ্যোগও যথাযথ ছিল, তাই অনেকটা এড়ানো গেছে।

ঘূর্ণিঝড় ফণী’র বিষয়ে ১০টি তথ্য

১. সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণীকে এখন ‘অতি মারাত্মক’ সাইক্লোনিক ঝড় বিভাগ থেকে মধ্যাঞ্চলে প্রবেশের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে দুর্বল হওয়ার পরে ‘মারাত্মক’ হিসেবে শেণিবদ্ধ করা হয়েছে।

২. শুক্রবার (৩ মে) দিবাগত রাতে পশ্চিম বঙ্গ থেকে তৎসংলগ্ন সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর অঞ্চলে প্রবেশ করে ঘূর্ণিঝড় ফণী। এদিকে ফণীকে মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সহ অনেক স্থানীয় সামাজিত সংগঠন সর্বাত্মক সতর্কতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

৩. ঘূর্ণিঝড় ফণী’র থেকে রক্ষা পেতে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২ লক্ষের অধিক মানুষ। এদিকে আশ্রয়স্থলে খাবার পৌঁছাতে প্রস্তুত রয়েছে বিমান বাহিনী। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আজ শনিবারের ঢাকা-চট্টগ্রাম বিজি ৪১৩ এবং চট্টগ্রাম -ঢাকা বিজি ৪১৪ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

৪. এদিকে অবস্থানরত এই ঘূর্ণিঝড় উত্তর-উত্তরপূর্বে দিকে বিকেল পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের আসামে পৌঁছাবে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

৫. সমুদ্র উপকূলের কিছু এলাকায় বাতাসের গতি ঘন্টায় ৫৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার পৌঁছাবে। তবে রোববার (৫ মে) বিকেলের পর থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হবে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়ে থাকতে অনুরোধ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

৬. বড় কোন ধরনের প্রভাব না পড়লেও গত রাত থেকেই ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব পড়তে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। এরই মধ্যে পটুয়াখালী, বরগুনাতে বাধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম। আর সারাদেশে বজ্রপাত ও ঝড়ের তাণ্ডবে ঘর চাপা পড়ে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে অন্তত ১৬ জন।

৭. শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদীর বাঁধসহ বেশ কিছু বাঁধ। তবে মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবন রক্ষার জন্যে ইতোমধ্যে বাঁধ সংস্কারে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন তিন শতাধিক সেচ্ছাসেবক। এখনও এখানের মানুষ সেই ২০০৯ সালের ভয়াবহ আইলার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি, এরই মধ্যে ফণীর আক্রমণ। এখনই বাঁধভাঙা রক্ষা করা না গেলে এখানের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।

৮. মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত সংকেতের আওতায় থাকবে। এদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

৯. বাংলাদেশের উপকূলের কাছাকাছি আসার পরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি ও দমকা বাতাস শুরু হয়েছে। তবে, যেসব এলাকার ওপর দিয়ে ওপর দিয়ে ফণী অতিক্রম করছে সেসব এলাকার কোথাও কোথাও বজ্রসহ বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। তবে, বড় কোনো ঝুঁকি নেই বলে আগেই জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

১০. ফানি' নামটি ফণী হিসাবে উচ্চারিত হয়, এই নামটি বাংলাদেশের প্রস্তাবিত। ফণী শব্দের অর্থ সাপের মাথার ফণা।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, গভীর নিম্নচাপটির প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘণ্টায় ৫০-৬০ কি. মি. বেগে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

এর ফলে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

অমাবস্যা ও বায়ুচাপ পার্থক্যের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ২-৪ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা

শেয়ার করুন: