বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলে শনিবার (৪ মে) ভোর ৬টার দিকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’।এর আগে শুক্রবার (৩ মে) সকাল পৌনে ৯টার দিকে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত হানে এটি। লণ্ডভণ্ড করে দেয় সেখানকার পুরী, গোপালপুর ও ভুবনেশ্বরসহ বিভিন্ন অঞ্চল। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে শুধু ওড়িশায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৯জন।
গত দুই দশকের মধ্যে প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি ছিল প্রবল শক্তিশালী। আয়তনেও ছিল বড়। এমনকি এটির আয়তন বাংলাদেশের মোট আয়তনের চেয়েও বেশি ছিল। ‘ফণী’র মোট আয়তন ছিল প্রায় দেড় লাখ বর্গকিলোমিটার।
আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী বিষুবরেখার খুব কাছে সৃষ্টি হওয়ায় এটি ছিল প্রবল শক্তিশালী এবং এর আয়তনও ছিল বড়। এর আয়তন ছিল প্রায় দেড় লাখ বর্গকিলোমিটার। দীর্ঘ পথ ও সময় ধরে ভারত ও বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগোনোর ফলে ঘূর্ণিঝড়টির মধ্যে বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্প সঞ্চিত হয়।
ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ফণী দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ফরিদপুর-ঢাকা অঞ্চল এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ফণী উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে পাবনা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ অঞ্চল এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। নিম্নচাপটির প্রভাবে দেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং দেশের অনেক স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা-ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
বড় কোন ধরনের প্রভাব না পড়লেও গত রাত থেকেই ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব পড়তে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। এরই মধ্যে পটুয়াখালী, বরগুনাতে বাধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম। আর সারাদেশে বজ্রপাত ও ঝড়ের তাণ্ডবে ঘর চাপা পড়ে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন।
এরমধ্যে নোয়াখালীতে ঘর চাপা পড়ে ১ জন; আহত অন্তত ৩০, বরগুনার পাথরঘাটায় খলিফার হাটে ঘর চাপা পরে ২ জন নিহত হয়েছে। বাগেরহাটের থানপুরে গাছের ডাল পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ার দরুণ বজ্রপাতে কিশোরগঞ্জে ৬, নেত্রকোণায় ২, ভোলাতে ১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং মেহেরপুরে ১ জন নিহত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশের উপর দিয়ে আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং সারাদেশে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এটি বাংলাদেশে ৬ ঘণ্টা অবস্থান করতে পারে। এরপর এটি আবার ভারতে মেঘালয়ে প্রবেশ করবে। বাংলাদেশে অবস্থানের সময় এটির গতিবেগ থাকবে ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার।
এতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ফণী তার দিক পরিবর্তন করেছে। এটি খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, নড়াইল, মেহেরপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও রংপুর হয়ে ভারত চলে যেতে পারে।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ফণীর প্রভাবে রিাজধানীসহ সারাদেশে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামছুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নয়, দেশের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।
এটি সাতক্ষীরার উত্তর দিয়ে যশোর, ঝিনাইদহ, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের দক্ষিণ দিয়ে চলে যেতে পারে। এসব এলাকায় প্রবল বাতাস হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ পেরিয়ে আসার পথে আরও দুর্বল হয়ে এই ঘূর্ণিঝড় শনিবার বেলা ১১-১২ টার মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যাঞ্চলে পৌঁছাতে পারে বলে আবহাওয়াবিদদের ধারণা।
এর আগে ফনির সম্ভাব্য আঘাতের কথা বলা হয়েছিল সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষীপুর, নোয়াখালী চট্টগ্রাম। এসব অঞ্চল অতিক্রমকালে ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০-১১০ কি.মি বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছিল।