‘ফণী’ আঘাত হানার আগেই নতুন আতঙ্কের কথা জানালো আবহাওয়া অধিদপ্তর

বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ফনি আছড়ে পড়লে দেশের উপকূলীয় নিচু এলাকা দ্বীপ ও চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সামনে অমাবস্যা থাকায় উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে এই জলোচ্ছ্বাস দেখা যেতে পারে। সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে ধমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এ জন্য উপকূলের ১৯ জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আগামী ৩ ও ৪ মে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট দফতর খোলা থাকবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফনির আশঙ্কা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব নৌযান বন্দরে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) উৎপল কুমার দাস জানিয়েছেন, ফনি সামনে রেখে উপকূলীয় ১৯ জেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণকক্ষ (কন্ট্রোলরুম)। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঝড়ো হাওয়ায় প্রাণক্ষয়ের পাশাপাশি জলোচ্ছ্বেসে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত আনার আগেই উপকূলীয় নিচু এলাকা থেকে মানুষ ও গবাদি পশু সরিয়ে নেয়া হলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভাব হয়।

ফনির সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের ইতোমধ্যে সতর্ক করা হচ্ছে। অল্প সময়ের নোটিসে তারা যাতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে, সেজন্য প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল। সে সময় ১২ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়ের সময় ১০ থেকে ৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছিল চট্টগ্রামের নিচু এলাকা। ঝড় উপকূল পার হওয়ার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার।

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় চট্টগ্রামে ১২ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল। ওই ঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ২২৫ কিলোমিটার।

ফনি আজ শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। তখন পুরো বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় থাকবে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পুরো বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় থাকবে, এই সময়টা ক্রিটিক্যাল।

তিনি বলেন, উচ্চগতির বাতাস ও দমকা ঝোড়ো হাওয়ার সময় সবাইকে নিরাপদে থাকতে হবে। ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে সারা রাত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে।

‘সেসময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার থাকতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী উপকূল অতিক্রম করার সময় বাংলাদেশের উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।’

শেয়ার করুন: