ফ্লাশব্যাক ১৯৮৩: ১৪ ফেব্রুয়ারির ইতিহাস ভুলে গেছে সবাই

বাঙালি বড়ই আত্মভোলা জাতি। এ জাতির পক্ষেই সম্ভব ঠুনকো আখ্যানে রক্তার্জিত অতীত গৌরব ভুলে যাওয়া। বাঙালির কাছে ধার করা সামান্য সুখানুভূতি যেন অনেক বড় প্রাপ্তি। নয়তো কেমনে সম্ভব হলো রাক্তার্জিত ‘স্বৈরাচার-প্রতিরোধ দিবস’ ভুলে যাওয়া? সময়ের পরিক্রমায় কথিত ‘ভালোবাসা দিবসের’ নামে পাশ্চত্যের একটি পরকীয়া আখ্যানের নিচে পিষ্ঠ হয়ে গেছে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের’ অন্তত ১০ তাজা লাশ।

এরশাদের সময়কালে ১৯৮২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান একটি নতুন শিক্ষানীতির প্রস্তাব করেন। যেখানে প্রথম শ্রেণী থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মেধা অথবা পঞ্চাশ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা মাপকাঠি করা হয়। এই ঘোষণার পর পরই আন্দোলনে নামে ছাত্রজনতা।

এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লক্ষাধিক ছাত্র-জনতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উপস্থিত হয়। পরে তারা স্মারকলিপি দিতে মিছিল করে সচিবালয়ের দিকে যাবার সময় পুলিশ সেই মিছিলে গুলি চালায়। এতে জয়নাল, জাফর, মোজাম্মেল, কাঞ্চন, আইয়ূব দীপালি সাহাসহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়।

হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে গ্রেফতার করে এরশাদের পুলিশ বাহিনী। সরকারী হিসেবে ১ হাজার ৩৩১ জনকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেছিল।
এভাবে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং ৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এরশাদ সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটে।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটিকে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ স্বৈরাচার-প্রতিরোধ দিবস হিসেবেই পালন করে আসছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে সাংবাদিক শফিক রেহমান বাংলাদেশে এ দিনে ‘ভালবাসা দিবস’ প্রবর্তন করলে এদেশের মানুষ আস্তে আস্তে রক্তার্জিত এ দিনটি ভুলতে শুরু করে।

ক্রমন্বায়ে বর্তমানের তরুণ সমাজ ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ দিনটি পুরোপুরি ভুলে গেছে। বর্তমানে দেশীয় কোম্পানির পাশপাশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দিবসটিকে তাদের পণ্য বিক্রির দিন হিসেবে পরিণত করেছে।

শেয়ার করুন: