নির্বাচন

নির্বাচন ঘিরে রাজধানীতে পুলিশের প্রস্তুতি

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সঙ্ঘাত-সহিংসতা ঠেকাতে রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে রাজধানীতে বাড়ানো হয়েছে র্যাব-পুলিশের টহল। নগরীর প্রবেশদ্বারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। পোশাকধারী বাড়তি পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন বিপুলসংখ্যক সাদা পোশাকের পুলিশ। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জলকামান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন ঘিরে এখন সারা দেশ সরগরম। যেমন মাঠে-ময়দানে চলছে উৎসবের আমেজ, তেমনি নির্বাচন ঘিরে উত্তাপও বাড়ছে। বিশেষ করে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী ঢাকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

দলীয় মনোনয়ন পাকাপোক্ত করতে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। ফলে উত্তাপ বইছে রাজধানীতে। মনোনয়ন নিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সঙ্ঘাত ঘটতে পারে যেকোনো সময়।

ইতোমধ্যে রাজধানীর আদাবরে মনোনয়ন নিতে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: সাদেক খানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষের মধ্যেই হুড়োহুড়িতে পিকআপের চাপায় আরিফ ও সুজন নামে দুইজন নিহত হয়েছেন।

অপর দিকে নয়াপল্টনে মিছিলে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে বিএনপির কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ফলে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজধানীর নিরাপত্তার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনকেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে ইতোমধ্যে তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নিয়ে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতরে মাসিক অপরাধ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আলোচনার বিষয় ছিল নির্বাচনী সহিংসতা। নির্বাচনে সহিংসতা হতে পারে এমন শঙ্কা ব্যক্ত করে সভায় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, সভায় ঝুঁকিপূর্ণ আসন চিহ্নিত করতে রাজধানীকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। রাজধানীর আসনগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোকে এক ক্যাটাগরিতে রেখে কম ঝুঁকিপূর্ণ ও কম গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোকে বাকি দু’টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।

তিন ক্যাটাগরির আসনগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী পৃথকভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সাথে আসনগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কোন্দলও বিবেচনায় আনতে বলা হয়েছে।

এসব এলাকায় যখন যা ঘটবে তাৎক্ষণিকভাবে তা সিনিয়র কর্মকর্তাদের জানানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কোনো তথ্য আড়াল করা যাবে না। কোনো ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বাছাই করা হয়েছে। এসব আসনে যাতে কোনো সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য আগাম প্রস্তুতি নিতেই ঝুঁকিপূর্ণ আসনগুলো বাছাই করে আলাদা করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার। দায়িত্ব পালনের সময় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট, লেগ গার্ড ও রায়ট গিয়ার বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করতে বলেছেন তিনি।

পাশাপাশি ডিউটির সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন কমিশনার। নির্বাচনে কোনো গোষ্ঠী সহিংসতার চেষ্টা করতে পারে, চড়াও হতে পারে পুলিশের ওপর। তাই পুলিশকে আত্মরক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে রায়ট গিয়ারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।

এ দিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের ছাড় না দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। সভায় কমিশনার বলেন, সব কিছু মাথায় রেখেই নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনী আচরণবিধি যে-ই লঙ্ঘন করুক না কেন, তিনি যে দলেরই হোক না কেন, তাকে ছাড় দেয়া যাবে না।

এ দিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের সহিংসতা রোধে পুলিশ সদর দফতর ও র্যাব থেকে মাঠপর্যায়ে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, স্থাপনায় বিশেষ নজরদারি রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, রাজধানীতে বাড়ানো হয়েছে র্যাব-পুলিশের টহল। নগরীর প্রবেশদ্বারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।

শেয়ার করুন: