জামাল খাসোগি
জামাল খাসোগি

খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ আসলে কে দিয়েছিলেন?

সৌদি আরবের সরকারি কৌঁসুলি বলছেন, ইস্তাম্বুলের কনস্যুলেটের ভেতর সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নন।

এই কর্মকর্তাটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মি. খাসোগিকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সৌদি আরবে ফিরিয়ে আনার। তিনি আরো বলেন, খাসোগির সাথে ধস্তাধস্তি হবার পর তাকে বিষাক্ত ইনজেকশন দেয়া হয়।

গত ২রা অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর খুন হন ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একজন সমালোচক জামাল খাসোগি। সরকারি কৌসুলি এই হত্যার ঘটনায় ১১জনকে অভিযুক্ত করেছেন এবং তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছেন। মামলাটি একটি আদালতে পাঠানো হয়েছে, এবং একই সঙ্গে সন্দেহভাজন আরও দশজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

রিয়াদে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ ব্রিফিং এ ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর সালান বিন রাজিহ সালান বলেছেন, মি: খাসোগির মৃত্যুর পর তার দেহ দূতাবাসের ভেতর খণ্ড খণ্ড করে ফেলা হয়।

এরপর তার দেহের বিভিন্ন অংশ কনস্যুলেটের বাইরে স্থানীয় একজন ‘সহযোগী’র কাছে হস্তান্তর করা হয়, জানান ওই মুখপাত্র। সেই সহযোগীর একটি স্কেচ তৈরি করা হয়েছে এবং দেহাবশেষের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

হত্যার দায়ে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের কারো নাম পরিচয় প্রকাশ করেননি মিস্টার সালান । তবে তিনি জানান, তদন্তে জানা গেছে যে ব্যক্তি খুনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনিই দলটির মধ্যে আলোচনাকারী হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করছিলেন।

উপ-গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল আহমেদ আল আসিরি তাকে ইস্তাম্বুলে পাঠিয়েছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল মিস্টার খাসোগিকে তার স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে সৌদি আরবে ফিরে যেতে বাধ্য করা।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সৌদি যুবরাজ এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। বাদশাহ সালমানের পুত্র এবং কার্যত সৌদি আরবের শাসনকাজ পরিচালনাকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই হত্যাকাণ্ডের সাথে তার কোনরকম সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। তবে সমালোচকরা মনে করছেন, এ ধরনের একটি ঘটনা সম্পর্কে যুবরাজ মোহাম্মদ কিছুই জানতেন না তেমনটি হওয়া খুবই অসম্ভব।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন – সৌদি পাবলিক প্রসিকিউটরের কিছু বক্তব্য সন্তোষজনক নয়। তিনি বলেন, ওরা বলছে যে মি. খাসোগি তাদের বাধা দিয়েছিলেন বলে তাকে হত্যা করা হয়, কিন্তু এ খুন আসলে ছিল পুর্বপরিকল্পিত।

“তার পর তারা বলছে তার দেহ কেটে টুকরো করা হয়েছিল, কিন্তু এটা আপনাআপনি হয় নি। তাকে হত্যা এবং মৃতদেহ টুকরো করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোক আগে থেকেই আনা হয়েছিল।

তুর্কি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে – খুনের কয়েক ঘন্টা আগে যে ১৫ জন সৌদি এজেন্ট ইস্তাম্বুল এসেছিল – তাদের সাথে হাড় কাটার করাত ছিল, এবং তাদের একজন ছিলেন সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত একজন ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট।

এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এর্দোয়ান বলেছেন, “সৌদি কর্তৃপক্ষ যেটি বলুক না কেন, মি. খাসোগি হত্যার নির্দেশ সৌদি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই এসেছে” – তবে তিনি বিশ্বাস করেন যুবরাজ সালমান সেটি করেননি।

অন্যদিকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ খাসোগিকে “টার্গেট করে নৃশংসভাবে হত্যা” করার অভিযোগে ১৭ সৌদি কর্মকর্তার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বলা হয়, তাদেরকে তাদের “কর্মকাণ্ডের পরিণাম ভোগ করতে হবে”।

যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন যুবরাজ সালমানের সাবেক একজন উপদেষ্টা সউদ আল-কাহতানি আছেন। তিনি এ ঘটনার “পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে জড়িত ছিলেন” বলে অভিযোগ করেছে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।

মিস্টার কাহতানির ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানান সৌদি মুখপাত্র, তবে জেনারেল আসিরির ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

অস্য দুজনের একজন হচ্ছেন মাহের মুতরেব – যিনি ‘অপারেশনের সমন্বয় এবং তা কার্যকর করেছিলেন”। অপরজন হচ্ছেন ইস্তাম্বুলের কনসাল-জেনারেল মোহাম্মদ আল-ওতাইবি।

শেয়ার করুন: