‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন, সাংসদ হয়ে দেশ তথা জনসেবায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিব। দেশসেবায় রাজনীতির চেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম আর নেই। আমি টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ চালাই। বাবার মৃত্যুর পর আমি তাই করে আসছি। এই টিউশনির টাকা জমিয়েই মনোনয়ন ফরম কিনেছি।’
সাক্ষাৎকারে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এবার সর্বকনিষ্ঠ মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহমুদুল হক জেমস (২৭)। ঢাকা-৭ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন তিনি। পাঠকদের জন্য তাঁর সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:
আপনি নিজেকে তরুণ সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে জাহির করছেন। আপনার কাছে তারুণ্যের ব্যাপারটা আসলে কি? কবি নজরুল ইসলাম তারুণ্য দেখেছিলেন লেনিন, কামাল আতার্তুকের মাঝে। আমার কাছে তারুণ্য মানে শুধুমাত্র বয়সের বাঁধনে জড়ানো কোন বিষয় নয়। কর্মস্পৃহা,চিন্তা-চেতনায় আসল। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেক শিক্ষিত, রুচিশীল,স্মার্ট,সুবোধ চিন্তার অধিকারী সবাই আসলে তরুণ। সেক্ষেত্রে, সজীব ওয়াজেদ জয় তারুণ্যের দৃষ্টান্ত। আবার, কর্মস্পৃহা ও বুদ্ধিদীপ্তটায় দেশরত্ন শেখ হাসিনাও আসলে তরুণ।
রাজনীতি নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? অ্যারিস্টটল বলেছেন,মানুষ জন্মগত ভাবেই রাজনৈতিক প্রাণী। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ কোন কিছুই রাজনীতির বাহিরে নয়। রাজনীতির ব্যপ্তি অপরিসীম। আমি এই দেশে জন্ম গ্রহণ করার পর এতদূর এসেছি, সেটার পেছনেও রাজনৈতিক পলিসির প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব আছে।
আপনার রাজনীতিতে আসার পেছনের গল্পটা শুনতে চাই । কেন রাজনীতিতে এলেন? আমি পারিবারিক ভাবেই রাজনৈতিক আবহে বড় হয়েছি। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি সনদ নেন নি। আমার মামা পদধারী আওয়ামীলীগের কর্মী। আবার এটাও নয় যে, শুধুমাত্র পারিবারিক আবহের কারণেই রাজনীতিতে এসেছি।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি ছোটবেলা থেকেই আলাদা ভালোলাগা ছিল। স্কুল জীবন পর্যন্ত উনাকে নিয়েই পড়াশোনা ও জানাশোনার চেষ্টা করেছি। কলেজে আসার পর ১/১১ পেলাম। তখনই প্রত্যক্ষ রাজনীতি তথা মিছিলে যাওয়া শুরু। শেখ হাসিনার মুক্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল হলাম। একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পরীক্ষা দেয়ার সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা এসেছিল। সেটা লিখতে গিয়েই আবিষ্কার করলাম, বড় হয়ে রাজনীতিতে যেতেই হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলাম।
বেশিরভাগ ছাত্রনেতা ছাত্রলীগ শেষ করার পর অন্যান্য সহযোগী সংগঠনে যোগ দিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির পর আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। আপনি তা করলেন না কেন?
এটা আসলে যার যার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এক এক জনের সিদ্ধান্ত এক এক রকমের হবে। আমি মনে করি, ছাত্রলীগ করার পর বুকের ভিতর অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকে, আমি সেটাকেই কাজে লাগাতে চাচ্ছি। ছাত্রলীগ আমার কাছে অদম্য সাহস, অদম্য ইচ্ছাশক্তি এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। আপনি যদি জাতির পিতাকে অনুসরণ করেন দেখবেন, তিনি অল্প বয়সেই মন্ত্রী হয়েছিলেন। আমাদের জুনায়েদ আহমেদ পলক ভাইও খুবই তরুণ। আবার, গাজীপুরের সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেলও খুবই তরুণ। এনালগ বাংলাদেশকে যিনি ডিজিটাল বাংলাদেশে নিয়ে গেলেন সেই সজীব ওয়াজেদ জয়ও তরুণ। বৈশ্বিক রাজনীতির প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখবেন,ফ্রান্সের এমানুয়েল ম্যাখোঁ, কানাডার জাস্টিন ট্রুডোও তরুণ। ইচ্ছাশক্তি ও কর্মস্পৃহা থাকলে অভিজ্ঞতাকেও জয় করা যায়।
ধরেন মনোনয়ন পেয়ে গেলেন। নির্বাচন করতে অনেক অর্থ লাগে বলে মিথ আছে। আপনি কোথায় পাবেন এত অর্থ? অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে জাতির পিতা তার নির্বাচনী খরচের সোর্স জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষের এক আনা-দুই আনা, মানুষের ভালোবাসা তাকে বারবার নির্বাচিত করেছে। আমি যদি আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষকে এটা বুঝাতে পারি যে, সুখে-দুঃখে আমি তাদের ঘরের ছেলের মত পাশে থাকব, তবে জিতে আসা কোন ব্যাপার না। আমি বিশ্বাস করি, ভালোবাসার শক্তির কাছে ব্যক্তিশক্তি মূল্যহীন।
প্রচার-প্রচারণায় কোন কোন বিষয়ের দিকে আলোকপাত করছেন? প্রচার প্রচারণায় আমি সরকারের উন্নয়ন প্রচার করছি। পাশাপাশি এটা বুঝাচ্ছি যে, দশরত্ন শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। আবার, ভোটাধিকার যে নাগরিকদের মর্যাদাবান করে এটাও বুঝাতে চাচ্ছি। আমি আমার আসনের ভোটারদের বুঝাতে চাচ্ছি, সার্বজনীন ভোটাধিকারের জন্য সার্বজনীন শিক্ষারও প্রয়োজন আছে। তাদের ভোটের মূল্যটা বোঝাতে চাচ্ছি।
যদি নির্বাচিত হন, তাহলে ঢাকা-৭ আসন নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি? আপনি জানেন ঢাকা-৭ আসন পুরান ঢাকায় অবস্থিত। পুরান ঢাকা নানান সমস্যায় জর্জরিত। এখানে ট্রাফিক জ্যাম, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা,পানি-গ্যাসের সমস্যা সহ নানান সমস্যায় জর্জরিত। শেখ হাসিনা বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বানিয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন রূপে সাজিয়ে দিচ্ছেন। তাই, বাংলার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক আজ শেখ হাসিনা।
পুরাণ ঢাকার ঐতিহ্য বহাল রেখেই বসবাসযোগ্য ঢাকা বিনির্মাণ করা যায়। সমবায়ের ভিত্তিতে জমি অধিগ্রহণ করে প্ল্যান করে পুনর্নির্মাণ করলে আমার বিশ্বাস পুরাণ ঢাকা হবে আইকনিক রেসিডেনশিয়াল এরিয়া। যেখানে যাতায়াত,পানি নিষ্কাশন অন্যান্য নাগরিক সুবিধাদি অনায়াসেই পাওয়া যাবে। সায়দাবাদ পানি শোধনাগারের মত পুরান ঢাকাকে উদ্দেশ্য করে নতুন পানি শোধনাগার নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে পানি সমস্যার সমাধান হবে বলেই বিশ্বাস করি।
আপনি জানেন, পুরান ঢাকা দিয়ে বেড়িবাঁধ আছে। এই বেড়িবাঁধ দিয়ে যাতায়াত সহজ করে দিলে মূল সড়কের উপর যানজট কমে যাবে অর্ধেক। ট্রাক স্ট্যান্ডের কারণে বেঁড়িবাঁধ ব্যবহারের কর্মদক্ষতা হারিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হাজারীবাগের ট্যানারি পুনর্নির্মাণ করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাতে আমরা শেখ হাসিনাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখি ।
লন্ডন টেমস নদীর তীরে, আর আমাদের ঢাকা বুড়িগঙ্গার তীরে। ব্যস্ততার দিক থেকে বুড়িগঙ্গা টেমস নদীর চেয়ে কোন অংশেই কম না। সদরঘাট ও সোয়ারীঘাট প্ল্যান করে সাজালে সরকার আর্থিক দিক থেকে লাভবান হবে। বুড়িগঙ্গাকেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষন করতে হবে। নদী মাতৃক বাংলাদেশে বুড়িগঙ্গাকে গাবতলী পর্যন্ত জলপথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে সড়ক পথের উপর চাপ কমে যাবে। এই সরকারের সময়ই ওয়াটার বাস চালু হয়েছিল, যা আজ নেই বললেই চলে।
আপনি জানেন, ঢাকা-৭ এ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল হওয়ায় এখানে শত শত পথ শিশু আছে। যারা সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তরুণদের সঙ্গে নিয়ে আমি এদের জন্য কিছু করতে চাই। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছা শ্রমের বিনিময়ে ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি এই পথশিশুদের মূল ধারায় নিয়ে আসতে পারব বলেই আমার বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা। তিনিই বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতাদের পিতার নামের পাশে আমার নাম লিখে দাও আর ঠিকানা দিয়ে দাও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর।’ আমি এই পথশিশুদের বাবার নামের জায়গায় শেখ মুজিবুর রহমান দিতে চাই, ছোট রাসেল যেভাবে বেড়ে উঠত, আমি তাদের সে ভাবেই বেড়ে তুলতে চাই। আর এই কর্মযজ্ঞে শেখ হাসিনাই আমার অনুপ্রেরণা।
আপনি যদি মনোনয়ন না পান, তারপর কি করবেন? রাজনীতিকেই কি পেশা হিসেবে নেবেন? দেখেন, রাজনীতিকে পেশা হিসেবে নেবার মত আপাতত পারিবারিক সক্ষমতা আমার নেই। আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য মনোনয়ন কিনেছি। রাজনীতি আমি আজীবন করব। মনোনয়ন না পেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকেই মনোনয়ন দিবেন, তার জন্যই স্বার্থহীনভাবেই কাজ করব। নির্বাচনের পর নিজের ও পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য শিক্ষিত ছেলে হিসেবে এমন পেশাকেই বেছে নেব, যে পেশায় কাজ করার পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতি করা যায়। সেক্ষেত্রে, ছোটখাটো ব্যবসা দিয়েই শুরু করব ইনশাআল্লাহ।
আপনার জন্মস্থান ময়মনসিংহ। আপনি সেখান থেকে মনোনয়ন না কনে ঢাকা থেকে কিনলেন কেন? দেখুন, আমি অনেক আগে থেকেই পুরান ঢাকায় থাকি। পুরান ঢাকাই আমাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দিয়েছে। পুরান ঢাকাই আমাকে জবি ছাত্রলীগের জেমস হিসেবে পরিচয় করে দিয়েছে। এই পুরান ঢাকার মানুষেরাই আমাকে সাহস জুগিয়েছে। আমি সব সময় তাদের পাশে ছিলাম, তারাও আমার পাশে ছিল। পুরান ঢাকার মানুষদের সাথে আমার আত্মার বন্ধন।