বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

মনোনয়ন সাক্ষাৎকার কি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পূর্ণোদ্দমে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে দলটির মনোনয়ন পত্র বিক্রি শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার। আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা ছিল।

তবে শেষ মুহূর্তে এটি গণভবনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে গণভবনে। কিন্তু নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে, কারা কোন আসনে মনোনয়ন পাবেন তা কি আগে থেকেই নিশ্চিত হয়ে আছে? মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এই সাক্ষাৎকার কি কেবলই আনুষ্ঠানিকতা? আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, গত দেড় বছর ধরে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা করেছে। মাঠপর্যায়ে জরিপ করেছে, বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার মনোনীত ব্যক্তিদের সঙ্গেও কথা বলেছে।

বিএনপি নির্বাচনে না আসলে প্রার্থী কারা হবে আর বিএনপি নির্বাচনে আসলে প্রার্থী হবেন কারা এসব বিষয়ে যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করেছে দলটি। এখন পর্যন্ত মোট ১২টি জরিপের কথা জানা গেছে যা আওয়ামী লীগ নিজস্ব উদ্যোগে আন্তর্জাতিক জরিপ প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালনা করেছে। এত দীর্ঘ প্রস্তুতির পর কারা কোন আসনে মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে দলটিতে খুব বেশি সংশয় থাকার সুযোগ নেই। অথচ জানা গেছে, চার দিনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পত্র বিক্রি হয়েছে মোট ৪ হাজার ২৩টি।

মনোনয়ন পত্র বিক্রির এই ধুম দেখেই বোঝা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হতে বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে কী দারুণ উন্মাদনা বিরাজ করছে। প্রশ্ন উঠেছে, যদি মনোনয়ন আগে থেকেই খানিকটা নিশ্চিত করা থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘিরে এই উন্মাদনা কেন? এমন প্রেক্ষাপটে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার কি আসলে কোনো গুরুত্ব বহন করে নাকি এই সাক্ষাৎকার একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র?

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মোটামুটি দুইশ আসনে আওয়ামী লীগ আগে থেকেই প্রার্থী ঠিক করে রেখেছ। এই আসনগুলোর জন্য এই সাক্ষাৎকারটি আনুষ্ঠানিকতার বেশি কিছু নয়। কিন্তু এখনো ৫০ থেকে ৭০টি আসনের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এসব আসনে যদি ভালো প্রার্থী পাওয়া যায় তাহলে তাঁদের কথা বিবেচনা করবে আওয়ামী লীগ। এবার এমন অনেক ব্যক্তি মনোনয়ন কিনেছেন যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ভাবেনি কেউ।

এই ব্যক্তিরা প্রার্থী হিসেবে নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কথা। মাশরাফি নড়াইল- ২ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পত্র কিনেছেন। অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎসাহেই তিনি মনোনয়ন পত্র কিনেছেন। চট্টগ্রাম-২ আসনের জন্য মনোনয়ন পত্র কিনেছেন তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম। মাশরাফি বাঃ তানজীবের মতো ব্যক্তিদের মনোনয়নের ব্যাপারে আলাদা করে ভাবছে আওয়ামী লীগ।

সব বিবেচনায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার ৩০০ আসনের জন্য না হলেও কিছু আসনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থীদের চিন্তাভাবনা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখে প্রার্থী বাছাই করতে চান। ভালো প্রার্থী পাওয়া গেলে এই আসনগুলোতে জরিপের ফলাফল বা তথ্যকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র।

শেয়ার করুন: