ঐক্যফ্রন্ট

যে কারণে নির্বাচনের নতুন তারিখেও ঐক্যফ্রন্টের আপত্তি?

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বাগত জানালেও, অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দাবি অনুযায়ী, তফসিল এক মাস পেছানোর দাবিতে অনড় রয়েছে তারা।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও, জোটের নেতা ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের একদিন পরেই ইংরেজি নববর্ষ।

ওই সময় দেশে কোনো কূটনীতিক ও বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবেন না। তাই সরকার উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নির্বাচন বানচাল করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকার চাইলে আলোচনা করে পুনঃতফসিল দেওয়া সম্ভব দাবি করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের দাবিতে অনড় থাকব। দাবি মানা না হলে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এদিকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে তাদের দাবির প্রতিফলন ঘটেনি এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিগগিরই তারা বৈঠকে বসবেন।

তিনি বলেছেন, এটা আরো পেছাতে পারতেন। তাদের আইনগত কোনো বাধা ছিলো না এবং কোনো তাড়াহুড়াও ছিলো না। কেন তারা মাত্র সাতদিন বাড়ালেন এটা বোঝা মুশকিল। আমরা দলীয়ভাবে এটার একটা প্রতিক্রিয়া জানাবো।

প্রসঙ্গত, গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর গত রোববার (১১ নভেম্বর) ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি তফসিল আরো এক মাস পিছিয়ে নেওয়ার দাবি জানায়। পরে আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির প্রেক্ষিতে, সোমবার নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।

সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট হিসেবে সিইসি বলেন বিএনপি, বিকল্প ধারা ও ঐক্যফ্রন্টসহ অন্যান্য দল নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এ সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলান এবং আমাদের বিশ্বাস ছিলো সব দল অংশ নিবে। সে আলোকেই নির্বাচন কমিশন তফসিল পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন, দুটি যৌক্তিক কারণেই নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। কমিশনের সেটি মেনে নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৩শ’ আসনে মনোনয়ন দেয়া, বিভিন্ন দল মিলে একটা সমন্বিত কিছু করা, আসনগুলো বণ্টন করা, এগুলো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সাতদিন পিছিয়ে দেয়াটা যথেষ্ট নয়।

তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয় আরেকটা বিষয় আমাদের বিবেচনায় ছিলো যে যেহেতু একটা খুবই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পরে আমরা চাচ্ছি একটা প্রশ্ন মুক্ত, গ্রহণযোগ্য হয়।

সেই জন্য যাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অবাধে আসতে পারেন, পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। কিন্তু এরকম একটা সময় নির্বাচন হচ্ছে যখন ওদের বড়দিন শেষ করে তাদের আসবার সুযোগই খুব বেশি থাকবে না।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা ও বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, কোনোভাবেই নির্বাচন আর পেছানো ঠিক হবে না।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তব সম্মত। ৩০ ডিসেম্বরের পরে আমাদের সরকারের সময় থাকে মাত্র ২৮ দিন অর্থ্যাৎ ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর মধ্যে কোন নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন স্থগিত হতে পারে।

আবার পুনঃনির্বাচন হতে পারে। সেজন্য একটা সময়ের প্রয়োজন। আমার মতে ৩০ তারিখ বাস্তব সম্মত হয়েছে। এর পরে যাওয়া বাস্তবসম্মত হবে না।নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও ব্রতী’র নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন তার অবস্থান থেকে একটু সরে এসেছে সেটাই একটা ইতিবাচক বার্তা দিবে।

তিনি বলেন, যে রাজনৈতিক দলগুলো, যারা চাপ বোধ করছিলো, যারা বোধ করছিলো যে সময় খুব কম, যারা নিজেদেরকে গুছিয়ে উঠতে পারেননি, তাদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্বাচন কমিশন এই কাজটি করে পরিবেশটাকে আর একটু ভালো করলো।

শারমিন মুরশীদ আরো বলেন, কমিশন সব দলকে যতটা বেশি সম্ভব এক মতের জায়গায় নিয়ে আসতে পারবে, নির্বাচন সবার কাছে ততটা বেশি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

শেয়ার করুন: