সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনী আসন ফেনী-১ থেকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হয়েছিল। ফলে এই দুর্নীতি মামলায় সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর রায়ের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থী হওয়া নিয়ে ঘোর সংশয় থাকায় চারদিকে এমনই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ঐক্যফ্রন্টের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, এ অবস্থায় নির্বাচনে জয়লাভের জন্য কম ঝুঁকি থাকা ফেনী-১ আসনটি থেকে ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
ফেনী-১ সংসদীয় আসনটি- ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলা ও পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এই আসনে ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে পৈত্রিক বাড়ি হওয়ায় ফেনী-১ আসনটি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আসন হিসেবে খ্যাত। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও সর্বশেষ ২০০৮ সালসহ টানা পাঁচ বার এ আসনটি থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর রায় ঘোষণার পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। ফলে নির্বাচনে ফেনী-১ আসনটি থেকে ঐক্যফ্রন্ট প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একাদশ সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পরশুরাম পৌর সভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব। তা না হলে খালেদা জিয়ার সমর্থন নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেনসহ যে কেউ ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হলে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে এই আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে জানান দলটির এই নেতা।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ফেনী-১ আসনে প্রার্থীতা নিয়ে গণফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আ.ক.ম সফি উল্যাহ গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়ার ইতিপূর্বে নির্বাচিত সংসদীয় আসন ফেনী–১ অথবা বগুড়ার আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য ড. কামাল হোসেনকে বিএনপির একাধিক নেতা প্রস্তাবনা দিয়েছে। তবে কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবে, ঐক্যফ্রন্ট এ বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি।
উল্লেখ্য, এ আসনটিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জাসদ নেত্রী শিরিন আখতার মহাজোট প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি সংসদীয় আসনে নিয়মিত জনসংযোগ ও যাওয়া-আসার মাধ্যমে জাসদের সাংগঠনিক ভিত্তি পুনর্গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে তাকে ‘হেভি ওয়েট’ প্রার্থী হিসেবেই মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন, ‘বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে কমিটি গঠনের পাশাপাশি সাংগঠনিক দক্ষতা বাড়াতে নিয়মিত এলাকায় কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছি। মনোনয়নের বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। তবে জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।’ অন্যদিকে আসনটিতে দলের মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়ে সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম।
এর আগে, ১৯৭৯ সাল থেকে বিএনপি, পরে জাপা থেকে ৯০ পর্যন্ত এ আসনের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন লে. কর্নেল জাফর ইমাম বীরবিক্রম (অব)। তবে ১৯৯১ সালে জাপা প্রার্থী এবং ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এ আসন থেকে নির্বাচন করে তিনি খালেদা জিয়ার কাছে হেরে যান।
এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোট যাবে কিনা এ ব্যাপারে আগামী দুই দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম। শনিবার (১০ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২৩ দলের বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এ কথা জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, জোটের প্রধান দল বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দুই দিনের মধ্যে।