ঐক্যফ্রন্ট

ঐক্যফ্রন্টের যে প্রস্তাব সরাসরি ‘না’ করল সরকার!

গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংলাপে অংশ নিতে বুধবার (৭ নভেম্বর) সাড়ে ১০টার দিকে গণভবনে পৌঁছেন ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। এর আগে, বুধবার সকাল পৌনে ১০টায় ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসা থেকে তারা রওয়ানা করেন।

জানা যায়, বেলা ১১টার পরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ শুরু হয়। বহুল প্রত্যাশিত আজকের সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে একজন উপদেষ্টা ও ১০ সদস্যের উপদেষ্টাবিশিষ্ট নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব দিয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গণভবনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপে এসে লিখিতভাবে এই প্রস্তাব দেয়। ঐক্যফ্রন্টের এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দেয়া ৪টি প্রস্তাব হলো-

১. বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ২. প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেওয়া ৩. ১০ সদস্যের নিরদলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও ৪. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেওয়া, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির বিষয়ে সরকার ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একমত হতে পারেনি।

সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন চায়। কিন্তু, এটা হলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে বলে তাদের জানানো হয়েছে। কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। নির্বাচন পেছানোর কথা না বলতে ঐক্যফ্রন্টকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা (একজন) ও ১০ সদস্যের উপদেষ্টার বিষয়ে প্রস্তাব মানা হবে না। কারণও নেই। বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া প্রস্তাবের জবাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা সংবিধান সম্মত না। এই দাবি মেনে নিলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। এ সুযোগে তৃতীয় পক্ষে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে জানোনো হয়।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বুধবার বেলা ১১ টা ১০ মিনিটের দিকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফা সংলাপ দুপুর ২টায় শেষ হয়। দু’পক্ষের পৃথক অবস্থানে কোনো পক্ষই ঐকমত্যে আসতে পারেনি জানা যায়। সংলাপ শেষে সোয়া ২টার দিকে গণভবন থেকে বের হন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের সময় মন্ত্রী-এমপি সদস্যরা সরকারি কোন সুযোগ গ্রহণ করবে না। নির্বাচনের সময় মন্ত্রীদের গাড়িতে পতাকা লাগানো হবে না। সরকারি সার্কিট হাউস ব্যবহার করতে পারবে না। অন্যান্য প্রার্থীরা যে সুযোগ-সুবিধা পাবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও সেই রকম সুযোগ সুবিধা পাবে। অতিরিক্ত সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, সেনা মোতায়েন থাকবে। তবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। সংসদ ভেঙে ১০ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের প্রস্তাব নাচক করে দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের বাহিরে যাওয়া যাবে না। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। নির্বাচনের সময় এমপিদের কোন পাওয়া থাকবে না। তারা (ঐক্যফ্রন্ট) যে ৭টি দাবি দিয়েছেন তাদের বেশিভাগ প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটা বাহানা। নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে গিয়ে তৃতীয় শক্তির জন্য কোনো সুযোগ রাখা হবে না।

কাদের বলেন, সত্যিকারের রাজবন্দিদের মুক্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তারা আজকে মন খোলে আলোচনা করেছেন। আজকের যে দাবি নিয়েছে এসেছেন। তার মধ্যে নির্বাচনের আগে কিছু বিষয়ে নিশ্চয়তা চান। তারা চাইচেন সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পর্রবতী ৯০ দিনের পর নির্বাচন।

সংলাপে নেত্রী বলেছেন, আপানারা নির্বাচনে আছেন। এখানে কারচুপি জালিয়াতি হবে না। বিদেশী পর্যবেক্ষক যে কোন ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে। তবে ইসির সমস্যা না হলে। বৈঠকের পরেও প্রধানমন্ত্রী তাদের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের প্রস্তাবের মধ্যে একটা বিরাট ফারাক রয়েছে। তবে আর আলোচনার কোন সুযোগ নেই। আমি মনে করি, সংলাপে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আগামী কাল প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে সব জানিয়ে দিবেন। তারা পথযাত্রা করতে গিয়ে আবার যদি বোমাবাজি ও অরাজকতা সৃষ্টি করে তাহলে আমরা বসে থাকবো না। তারা খালেদা জিয়ার জামিন চেয়েছেন। আমরা বলেছি, এই মামলা ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেছে। এখন আদালত তাকে দণ্ড দিয়েছে। আদালত যদি জামিনে মুক্তি দেয় আমাদের কোন সমস্যা নেই।

প্রসঙ্গত, সংলাপে বসার আগে সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উভয়েই ‘প্রত্যাশা পূরণের আশাবাদ’ ব্যক্ত করেন। প্রথম দফায় অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়েই দ্বিতীয় দফায় সংলাপ হয় বলে জানা যায়। এর আগে, ১ নভেম্বর প্রথম দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

শেয়ার করুন: