ঐক্যফ্রন্ট

সংলাপ ব্যর্থ হলে কী হবে?

আওয়ামী লীগ চলতি মাসের প্রথম দিন থেকেই রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করেছে। ১ নভেম্বর থেকে ধারাবাহিক ভাবেই রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ চলছে। আগামীকাল বুধবার (৭ নভেম্বর) ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকের মধ্যে দিয়েই সংলাপ শেষ হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট ভাবেই বলেছেন, ৭ নভেম্বরের পর আর কোনো সংলাপ হবে না। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অতটা গুরুত্ব না পেলেও, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের দিকেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের দৃষ্টি। সংলাপের সফলতা ও ব্যর্থতার উপরই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা-সেই বিষয়টিসহ অনেক কিছুই নির্ভর করছে।

স্পষ্টতই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সংলাপ নিয়ে দুটি ধারা রয়েছে। একটি ধারা মনে করছে প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই কিছু দাবি দাওয়া মেনে নিয়ে একটি নির্বাচনে যাওয়া যায়। অন্যধারা মনে করছে, প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাওয়া আত্মহত্যার শামিল হবে। সংসদ ভেঙে দেওয়া ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এই দুটি বিষয়কে তাঁরা মূল দাবি হিসেবে সামনে আনতে চাইছে। এই অবস্থায় সংলাপের সফলতা ও ব্যর্থতার উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চারটি বিষয় ঘটতে পারে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

১. সংলাপ সফল হলে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আলাদা, বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট আলাদা, ইসলামিক দলগুলো আলাদা, বামফ্রন্ট আলাদা নির্বাচনে আসবে। এর ফলে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন হবে। সবগুলো দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। আর এর ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটি ধারা সূচিত হবে যে, দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে তিনি জনগণের ওপর আস্থা রাখেন, জনগণ যদি তাঁকে ভোট দেন তিনি আছেন, না দিলে নাই।

২. জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ ব্যর্থ হলেও, এবারের নির্বাচন ২০১৪ এর মতো হবে না। কারণ, ইতিমধ্যেই বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের নেতারা বলেছেন, তাঁরা নির্বাচনে যাবেন। এছাড়া আজ ইসির সঙ্গে বৈঠক করে তাঁরা নির্বাচন যথাসময়ে করারও দাবি জানিয়েছেন। আজ ইসলামিক দলগুলোর জোটের নেতারা বলেছেন, তাঁরাও নির্বাচনে যাবেন। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সরকারের সঙ্গে সংলাপ শেষে নির্বাচনে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। এর বাইরেও অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ প্রকাশ করেছে।

শুধুমাত্র ঐক্যফ্রন্ট ও বামমোর্চা নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো সংশয়ে রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের খবরে জানা গেছে, সংলাপ ব্যর্থ হলে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে ভাঙন দেখা দেবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি অংশ, সংলাপে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের ভিত্তিতে নির্বাচনে যেতে ইচ্ছুক। তাই, স্বভাবতই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ ব্যর্থ হলে, জোটটি বিভক্ত হয়ে একটি অংশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আর এমনটি ঘটলে সেই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলতেই হবে। তবে নির্বাচন এমন হলে তার ব্যাপারে স্পষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। কারণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট খণ্ডিতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে আর যাইহোক তাদের ক্ষমতায় আসা অসম্ভব।

৩. সংলাপের ফলাফল ব্যর্থ হয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পুরোপুরি ভাবে নির্বাচন বর্জন করলে এবং এর ধারাবাহিকতায় আরও কিছু দল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে দেশের আগামী নির্বাচন আবার একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিশেষত দেশের দ্বিতীয় জনপ্রিয় দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি যদি নির্বাচন না আসলে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।

৪. গত কিছুদিন ধরেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের আস্ফালন দেখা যাচ্ছে লক্ষণীয় ভাবে। তাঁদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। তাঁরা মনে করছে, সরকার তাদের রেখে নির্বাচন করতে পারবে না। সংলাপ ব্যর্থ হলে এবং ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারে বা নির্বাচন হওয়া যদি তারা বন্ধ করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।

সংলাপের সফলতা-ব্যর্থতার উপর নির্ভর করে উল্লিখিত চারটি ফলাফলের কোনটি হবে, সেটি বোঝা যাবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই। আগামীকাল বুধবার শেষ বারের মতো সংলাপ হবে এবং পরদিন ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন। তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলো কে কোন অবস্থানে যায়, সেটির উপরই নির্ভর করছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কী হবে বাংলাদেশে।

শেয়ার করুন: