শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি: শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনার নতুন চমক কী!

সায়েদুল আরেফিন: দেশ সেবার জন্যই রাজনীতিকগণ রাজনীতি করেন বলে দাবি করেন দুনিয়াজুড়ে। তাইতো তো তাঁদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই, নেই অফিস আওয়ার, পরিবারের সবাইকে একরকম বঞ্চিত করেই তাঁরা ছুটে চলেন রাতদিন। লক্ষ্য তাঁদের এক হলেও উন্নয়ন ভাবনায় আছে ভিন্ন ভিন্ন মত আর ভিন্ন ভিন্ন পথ। তবে দেশ ও মানুষের কল্যাণে তাঁরা মোটাদাগে একমত তা বলাটা অন্যায় হবে না।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে চলছে সংলাপ। কীভাবে হবে নির্বাচন, কেমন হতে পারে নির্বাচনকালীন আর নির্বাচন পরবর্তী সরকার তা নিয়েও আছে অনেক জল্পনা কল্পনা দেশজুড়ে, মানুষের মুখে মুখে। কেউ কেউ বলছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জোট সরকারের যে মডেল শেখ হাসিনা ডেভলপ করেছেন আগামীতে তা আরও পরিশীলিত হবে, আসতে পারে নতুন মাত্রা।

অভিজ্ঞ বা দক্ষরা নির্বাচিত হলেও পেতে পারে মন্ত্রিসভায় আসন, যদি সে বিরোধী দলেরও হন। গরীব বা উন্নয়নশী দেশের উন্নয়নের মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে উন্নয়নের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাই বিশ্ব দরবারে অন্য এক সম্মানের আসনে আসীন হয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনের খবর পাওয়া খুব যে কঠিন তা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন। তাঁর খুব কাছের মানুষও জানেন না একটু পরে তিনি কী করতে যাচ্ছেন অথবা কী বলবেন। তিনি দেশপ্রেমিক সবাইকে সঙ্গে নিয়েই দেশের উন্নয়ন চান, তাঁদের মত ও পথ ভিন্ন হলেও। এই কথার পক্ষে তাঁদের যুক্তিগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে:

তাঁর জোটের শরীক দলের থেকে বাছাই করে মোটামুটি যোগ্যদের মন্ত্রীসভায় নিয়েছেন, যদিও অনেককেই তিনি খুব পছন্দ করেন তা নয়। তবুও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে তিনি তা করেছেন গণদাবিকে সম্মান দেখিয়ে তিনি মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন। জোটের সবাই যখন ২০ দলীয় জোটের আগুন সন্ত্রাসের পর থেকে তাদের সভা সমাবেশ করতে দিতে একদম অনিচ্ছুক ঠিক তখনই তিনি নিজ উদ্যোগে ও দায়িত্বে ২০ দলীয় জোটের সভা সমাবেশ করার অনুমতি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে এত বিলম্বের পরেও তিনি তা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেন নি, বরং আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছেন। জাতির পিতাকে হত্যার বিচারে তিনি তাঁর হৃদয় ছেঁড়া আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

জেল হত্যার বিচার নিয়েও তিনি অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। দেশের ও দেশের মানুষের জীবন মানের উন্নয়নের স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হবে জেনেও, চরম অনিচ্ছায় তিনি ছাত্রদের কোটা সংকারের দাবি মেনে নিয়েছেন। এই দাবির জন্য সহিংস আন্দোলন করার অপরাধে আটক হবার পরেও ছাত্রদের ছেড়ে দিয়েছেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে, ছাত্ররা কারও না কারও দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে এটা করেছে, তার নমুনাও মিডিয়াতে এসেছে।

শিশুদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে তিনি একাত্ম হয়েছেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতায় যথাসম্ভব আইন পরিবর্তন করেছেন। তাতে উভয় পক্ষই কিছুটা হলেও নাখোশ হয়েছেন। তাই তিনি মাঝামাঝি একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে যেতে পেরেছেন বলে মনে করা হয়। ৬০ কর্ম দিবসে যে মামলা শেষ হবার কথা খালেদা জিয়ার সেই মামলার রায়ের জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করেছেন দেশের স্বার্থে। বহুবার বিএনপি-জামায়াত জোট শেখ হাসিনা বা তাঁর দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ২১ আগস্ট এর মতো ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তা প্রমাণ হয়েছে তারপরও তিনি উদার মনোভাব দেখিয়েছেন খুনি, অপরাধীদের প্রতি।

খালেদা জিয়ার ছেলে কোকোর মৃত্যুর পরে চরম অসম্মানিত হয়েছেন। এছাড়াও ২০ দলের কাছে বহুবার অপমানিত হবার পরেও নিজের রাজনৈতিক জোটের সবাই যখন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে চরম নেতিবাচক ছিলেন, তখন তিনি একক সিদ্ধান্তেই সংলাপ শুরু করেছেন, যা ২০ দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকলে করতো না।

সংলাপের সময় বিরোধীদের চরম অন্যায্য দাবিগুলোকে তিনি ধৈর্য সহকারে শুনে খুব শান্ত ও মার্জিত ভাষায় তার জবাব দিয়েছেন। সংলাপের পরে বাইরে গিয়ে অনেকেই অনেক অশ্লীল কথা বলার পরও তিনি অনেকের সঙ্গে দ্বিতীয়বার বসতে সম্মত হয়েছেন, বিশ্ব মোড়লরা তাঁর পক্ষে থাকার পরেও তিনি তা করেছেন।

শেখ হাসিনা সরকারে কূটনৈতিক সাফল্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে ইচ্ছুক বলে বিশ্ব মিডিয়ার খবরে আভাস পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনা এক ভিন্ন মাত্রার সফল কূটনীতিক এবং সৎ, দেশ অন্ত:প্রাণ প্রাজ্ঞ রাজনীতিক তা অনেকেই অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণের ধারণা বড় কোনো অঘটন না ঘটলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করবে কারণ তাঁর মতো গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্তমানে বাংলাদেশে কেউ নেই। নির্বাচনের সময় বা নির্বাচনের পরে জয়লাভ করলে তিনি কি সর্বদলীয় সরকার গঠন করবেন! এর পরে শেখ হাসিনা কী চমক দেখাবেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে! কেউই তার পূর্বাভাস দিতে পারছেন না, তবে চমক যে একটা আছে তা তে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণের প্রায় সকলেই একমত। কিন্তু কী সেই চমক তা কেউ জানেন না। লেখক: উন্নয়নকর্মী

শেয়ার করুন: