সৈয়দ আশরাফ
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম

রাজনীতির এমন দিনে নেই আশরাফ

মাঠের উত্তাপ এখন আলোচনার টেবিলে। চারদিকে সংলাপ এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। গণভবন থেকে চায়ের দোকান, সর্বত্রই রাজনীতির আলাপ। তফসিল ঘোষণার দিন ধার্য হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দুর্গে এখন আসন ভাগাভাগির হিসাব চলছে। অথচ রাজনীতির এমন দিনে নেই সৈয়দ আশরাফ। দলের দুর্দিনে যিনি কাণ্ডারির ভূমিকা রেখেছেন, তিনি আজ দূরপ্রবাসে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সৈয়দ আশরাফের এমন অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘যখন দলের আলোচনার টেবিলে সবাই থাকি, তখন বেদনায় মন ভরে ওঠে। সবাই থাকছেন, অথচ আশরাফ ভাই জীবিত থেকেও বৈঠকে নেই।’ সৈয়দ আশরাফ। একটি আদর্শের নাম। হিংসার দাবানলে যখন রাজনীতির ঘর পুড়ে ছাই, তখনও তিনি স্থির থেকেছেন, থেকেছেন অবিচল। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন রাজনীতিকও বটে। বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাবার দেখানো পথেই হেঁটেছেন রাজনীতির দীর্ঘসময়।

সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন সৈয়দ আশরাফ। ওই সময় তিনি দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখেন। ১/১১ এর পর যখন টালমাতাল দেশের রাজনীতি, আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতারা যখন বিতর্কিত ভূমিকায় সমালোচিত, তখন সৈয়দ আশরাফ শেখ হাসিনার প্রতি অবিচল আস্থা প্রদর্শন করে সংগঠিত রাখেন দলকে।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সৈয়দ আশরাফ নজরকাড়া ভূমিকা পালন করেন বলেই আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে এমন প্রচার রয়েছে দলের মধ্যেও। পরে স্থানীয় সরকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। আওয়ামী লীগের ২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করলেও সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির তেমন কোনো অভিযোগ ওঠেনি। সাদামাটা জীবন-যাপনকারী মানুষটি বরাবরই থেকেছেন নির্লোভ-নির্মোহ। তবে অভিযোগ ছিল মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর দলীয় এবং দাফতরিক কাজে ক্রমশই অনিয়মিত হয়ে পড়েন সৈয়দ আশরাফ। এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে।

দীর্ঘদিন থেকেই দুরারোগ্য ফুসফুস ক্যান্সারে ভুগছেন সৈয়দ আশরাফ। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন। দিনে দিনে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে বলে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম। জেল হত্যা দিবেসের ওপর সোমবার এক আলোচনা সভায় সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম বড় ভাই সৈয়দ আশরাফের শারীরিক অবস্থার অবনতির ব্যাপারে অবগত করেন। আশরাফ তার মেয়েকেও চিনতে পারছেন না বলে জানান শাফায়াতুল। এ সময় তিনি ভাইয়ের রাজনৈতিক জীবনের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফ একজনই, তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। একদিন বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হবে তখন তিনি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে (তাদের বাবা) ছাড়িয়ে যাবেন। তিনি হবেন ইতিহাসের মহানায়ক।’

সৈয়দ আশরাফের রাজনৈতিক জীবনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। প্রকৃতি তার নিয়মেই চলে। এ চলমান ধারায় মানুষ কর্মফল রেখে যায়, যা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকে। আজকে অসুস্থতার জন্য সৈয়দ আশরাফ আমাদের আলোচনার টেবিলে থাকতে পারছেন না ঠিক, কিন্তু তার দেখানো পথেই আমরা হাঁটার চেষ্টা করছি। তিনি দুর্দিনে দলকে যেভাবে আগলে রেখেছেন, তা অবস্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাসে। আমরা তার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।’

শেয়ার করুন: