একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী সফর অব্যাহত রেখেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তবে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রাখতে বিচক্ষণতার সাথে যোগ্য প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামানোই দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কঠিন এই কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করে ফেলেছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে তিনি প্রস্তুত করেছেন এমপি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন ও আ. লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব টিম, দলীয় জরিপ, কয়েকটি সরকারি সংস্থার একাধিক জরিপের ভিত্তিতে ৩০০ আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ নামের তালিকা এখন আ. লীগ সভানেত্রীর ল্যাপটপে। চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়েছেন বিতর্কিত এমপি ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তাদের বদলে জায়গা পেয়েছেন দীর্ঘদিনের ত্যাগী-পরীক্ষিত এবং ক্লিন ইমেজের কিছু নতুন মুখ।
তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সবার মতামত নিয়ে সভানেত্রী সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে সাংবাদিকদের জানান আ. লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য রশিদুল আলম। জানা গেছে, আ. লীগের সর্বশেষ যৌথসভায় প্রার্থী চূড়ান্ত করার আভাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে গত সপ্তাহে তিনি কথা বলেন দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গেও।
আ. লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে যুক্ত দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েক দফা জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছেন দলীয় সভানেত্রী। যারা প্রথমবার দলের টিকেট পাচ্ছেন, তাদেরকে ইতোমধ্যে ডেকে নিয়ে মাঠে কাজ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত হচ্ছেন আলোচিত-সমালোচিত বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি।
ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করে বাদ দেওয়া এসব নেতাদের বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, দখলদারি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, অনৈতিকভাবে বিত্তবৈভব গড়া, সন্ত্রাস ও দলীয় কোন্দল সৃষ্টি, এমনকি বিএনপি-জামায়াত নেতাদের নিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টির অভিযোগ আছে। আ. লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, এক বছর ধরে মনোনয়ন বাছাইয়ের কাজ চলছে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করবেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
আ. লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোটের শরিক দলগুলোর প্রার্থী চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনে সব দল মিলে অর্ধশতাধিক আসনে ছাড় দিলেও এবার প্রত্যেক দলের চাহিদাই বেশি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১০০ প্রার্থীর তালিকা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। ১৫টি আসন চায় ওয়ার্কার্স পার্টি। জাসদের চাহিদাও গতবারের চেয়ে বেশি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। নির্বাচনী জোর প্রচার-প্রচারণায় না থাকলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি চলছে দলটির। সে কারণে অতীতের মতো এবারও মহাজোটগতভাবেই নির্বাচনে যাবে ক্ষমতাসীন আ. লীগ। এজন্য বর্তমানে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে চায় দলটি। জাতীয় পার্টিও আ. লীগের সঙ্গে নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। সে কারণে সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১০০ প্রার্থীর নামের তালিকা জমা দিয়েছেন।
এ ছাড়া জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি-জেপি, তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপসহ জোটের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে তাদের চাহিদার কথা জানিয়েছে আ. লীগকে। তবে কত আসন দেওয়া হবে তা নির্ভর করছে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর। তবে জোট প্রার্থীদের হিসেবে ধরে নিয়েই প্রার্থী তালিকা করেছে আ. লীগ।
জোট শরিকরা নিজেদের মতো করে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করে জমা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। যারা দেননি, তারা কয়েকদিনের মধ্যেই জমা দেবেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে আ. লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু সাংবাদিকদের বলেন, প্রার্থী চূড়ান্ত করার এখতিয়ার একমাত্র দলীয় সভানেত্রীর। সারা দেশের নেতা-কর্মীরা তার সিদ্ধান্তের ওপর আস্থাশীল। যেখানে যাকে দিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে, তিনি তাকেই প্রার্থী করবেন।