বিএনপির গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছে মোজাম্মেল হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মী। এরই পেক্ষিতে বিএনপির গঠনতন্ত্রের সংশোধিত ৭ ধারাসহ সব বিষয়ে পর্যালোচনা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) নিজেকে বিএনপির কর্মী দাবি করে মোজাম্মেল হোসেন নামে এক ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে এসে ‘ডেচপ্যাচে’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আবেদনপত্রটি জমা দেন।
মোজাম্মেল হোসেনের আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়বতাবাদী দল (বিএনপি) এর নীতি ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি বিএনপিতে যোগদান করি। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় সমাজের দুর্নীতি পরায়ন ও কুখ্যাত বলে পরিচিত কোন ব্যক্তি বিএনপির জাতীয় কেন্দ্রীয়, নির্বাহী, স্থায়ী কমিটি বা যে কোন পর্যায়ের কমিটিতে বা কমিটির সদস্য পদে কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলের প্রার্থী বলে বিবেচিত হবে না মর্মে উল্লেখ ছিল। এ বিষয়ে মোজাম্মেল হোসেনে বলেন, ‘পরিবর্তনে জাতীয়তাবাদী আদর্শে উজ্জীবিত কর্মী হিসেবে আমি বিস্মিত ও হতবাক।’
এদিকে, বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিটকারী মো. মোজাম্মেল হোসেনকে নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে নতু্ন এক জটিলতা। মোজাম্মেল হোসেন রিট করার পর থেকে প্রকাশ্যে আসছেন না। এমনকি আইনজীবীও তার পরিচয়ের বিষয় কিছু বলছেন না। শুধু তাই নয়, রিট মামলায় দেয়া তার বর্তমান ঠিকানায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, গত মে মাস থেকে মোজাম্মেল হোসেন সেখানে আর থাকেন না। মোজাম্মেল হোসেন তার রিট পিটিশনে- ১৭/২, হাজী আলী হোসেন রোড, বাইশটেকী, কাফরুল, মিরপুর ১৩, ঢাকা ১২১৬ এই ঠিকানা উল্লেখ করেন।
রিট পিটিশনে উল্লেখ করা ঠিকানা অনুযায়ী বুধবার (১০ অক্টোবর) বিকালে কাফরুলে গিয়ে তার খোঁজ নিতে গেলে বাড়িওয়ালা ফজলুল হক চৌধুরী জানান, মোজাম্মেল হোসেন নামে একজন আইনজীবী স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাসিক সাড়ে আট হাজার টাকা ভাড়ায় তার বাড়িতে ছিলেন। গত মে মাসে তিনি বাসা ছেড়ে চলে যান। তিনি বলেন, ‘মোজাম্মেল হোসেন নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রী ও দুই কন্যা নিয়ে আমার বাড়ির পঞ্চম তলায় মাসিক সাড়ে ৮ হাজার টাকায় ভাড়া ছিলেন। তিনি পেশায় আইনজীবী ছিলেন। তবে গত মে মাসে তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে উত্তর বাড্ডায় চলে যান।
তার শ্বশুরের বাসা বাড্ডার সাতারকুলে। বাড্ডার একটি স্কুলে তার স্ত্রীর চাকরি হওয়ায় তিনি এখান থেকে চলে যান। তার জমজ দুই মেয়ে রয়েছে। তারা আমার বাড়িতে অনেকদিন ভাড়া ছিলেন।’ মোজাম্মেল হোসেন নিজেকে বিএনপির একজন কর্মী দাবি করলেও আসলে সে বিএনপির কর্মী কিনা এ বিষয়ে ফজলুল হক চৌধুরী বলেন, ‘তার কথাবার্তায় তাকে আমার অন্য রাজনৈতিক দলের কর্মী মনে হতো। বিএনপি সমর্থক বা কর্মী তাকে মনে হতো না। তার সঙ্গে যারা আসতেন, তাদের কথায়ও তাই মনে হতো।’
জানা গেছে, মোজাম্মেল হোসেনের গ্রামের বাড়ি বরিশালের পটুয়াখালীতে। তবে তার আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদীর কাছে জানতে চাইলে তিনিও কিছু বলতে পারেননি। আর তার মোবাইল নম্বরও দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে মোজাম্মেলের আইনজীবী বলেন, ‘আমি তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা দেখে রিটে সেই ঠিকানা লিখেছি। তার স্থায়ী ঠিকানা আমার জানা নেই।’ তবে মোজাম্মেল হোসেন নিজেকে একজন বিএনপির কর্মী দাবি করলেও কোনও পদে নেই বলেও জানান তার এই আইনজীবী।
উল্লেখ্য, বিএনপির গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে মোজাম্মেল হোসেনের এক রিট করার পর বুধবার (৩০ অক্টোবর) এই রিট মামলার শুনানিতে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে ইসির প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে আবেদনটি এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।