বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারাবন্দী অবস্থায় চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার আমার সঙ্গে অনেক আগেই সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। আমি যদি জনগণের সঙ্গে বেইমানি করে কারামুক্ত হয়ে ক্ষমতার অংশীদার হতে চাইতাম তাহলে অনেক আগেই আমি মুক্ত থাকতাম।
তিনি বলেন, যেখানে আমি এই সরকারের সাথে আপোষ করিনি, সেখানে বিএনপির কে গণভবনে সংলাপে যেতে চায়? কে বা কারা চায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে? তাদের তালিকা আমার কাছে চাই।
তাদের কি মনে আছে ওয়ান ইলেভেনের সেই দুঃসময়েও মান্নান ভূঁইয়াকে কেন বহিষ্কার করেছিলাম? ওয়ান ইলেভেন সরকারের সাথে হাত মেলানোর কারণে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলাম। এখনও যদি কেউ একই পথে হাঁটে, তবে সে দলের যত বড় নেতাই হোক না কেন, তাদেরও একই পরিণতি হবে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারাবন্দী অবস্থায় চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে তার সঙ্গে স্বজনরা সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়া এক স্বজনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানা যায়।
খালেদা জিয়া বলেন, কেউ ভুল করলে তাকে বিএনপিতে রাখা হয়, কিন্তু কেউ দলের সঙ্গে কিংবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের সঙ্গে বেইমানি করলে বিএনপি তার জন্য নয়।
এটা যেন তাদের মনে থাকে। আমি হয়তো কারাগারে আছি, কিন্তু বিএনপির কোটি কোটি নেতাকর্মী আমি বাইরে রেখে এসেছি। আল্লাহর রহমতে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আমার ভরসাস্থল। তারা যেকোন ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।
এসময় অশ্রুসিক্ত খালেদা জিয়াকে বিচলিত অবস্থায় দেখা গেছে বলেও জানান তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য অনেক অফার দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে কারামুক্তির বিষয়ও ছিল। কিন্তু আমি সেই অফার গ্রহণ করিনি, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো বলে। অথচ এখন গণভবনে যাওয়ার এক অফারেই অনেকে সেখানে ডিনারের জন্য পা বাড়িয়ে রাখছে! বিএনপির কারা কারা সেখানে যেতে চায়, বা যায় সেই তথ্য আমি চাই।
অবশ্য এর আগে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড বাড়ানোর পরও তাকে কারাগারে রেখে সংলাপ হবে জিয়া পরিবারের সাথে বেইমানির শামিল। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সরকারের সাথে বিএনপির কোনো সংলাপ হতে পারে না।
এমনকি ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি গণভবনে শেখ হাসিনার সাথে সংলাপ করে তাহলে বিএনপি ঐক্যফ্রন্টে থাকবে কিনা তা নিয়েও নতুন করে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রিজভী বলেন, এ বিষয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী মহল আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কিন্তু আলোচনা ছাড়া কিংবা নিজেদের মতো করে বিএনপির কেউ যদি ওই সংলাপে অংশ নেয়, তাহলে ইতিহাস তাদেরকে বেইমান হিসেবেই চিহ্নিত কর রাখবে। আর রাজনীতিতে বেইমানরা কখনোই সফল হয় না। এই দেশের মাটি কখনোই বেইমানদের সফল হতে দেয়নি।
তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিতে থাকা বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ এবং ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ওই বৈঠকে অংশ নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী বলে ঐক্যফ্রন্ট সূত্রে জানা গেছে। ঐক্যফ্রন্টের এ সংক্রান্ত বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত না থাকলেও বিএনপির এই দুই নেতা ড. কামালের চেম্বারে হওয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে গণভবনে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৮টায় বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ পৌঁছে দিয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
চিঠি হস্তান্তর করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা জানেন, গত পরশু যুক্তফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আমাদের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে সেটা আমি রিসিভ করেছিলাম। সেটা আপনার দেখেছেন। চিঠির জন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং আমার মাধ্যমে তার উত্তরে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।’
শেখ হাসিনার পাঠানো সংলাপের চিঠি নিয়ে ড. কামালের কাছে আ.লীগ নেতা গোলাপ তিনি বলেন, ‘অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই গণতন্ত্র, সংবিধান সম্মতভাবে সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুয়ার সকলের জন্য উন্মুক্ত।
তাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনসহ যুক্তফ্রন্ট নেতাদের ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।