নবগঠিত ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সুশীল সমাজের লোকজনকে ঐক্যফ্রন্টের কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ঐক্যফ্রন্টে আনার প্রচেষ্টায় মূল ভূমিকা রাখছেন এর আহ্বায়ক ও গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন এবং ডা. জাফরুল্লাহ।
ওয়ান ইলেভেনে সময়কার কুশীলব তৎকালীন কয়েকজন উপদেষ্টাকেও ঐক্যফ্রন্টে আনার চেষ্টা চলছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমানকে ঐক্যফ্রন্টে আনার জন্য তোড়জোড় চালানো হচ্ছে। ঐক্যে আনার চেষ্টা হচ্ছে তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরীকে।
এছাড়া ঐক্যফ্রন্টে আনার চেষ্টা চলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল মতিনকেও। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আব্দুল মতিন থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। তাঁকে ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন জোটটির কয়েকজন নেতা। ড. কামাল, ডা. জাফরুল্লাহসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের ওয়ান ইলেভেনের সুশীলদের ভেড়ানোর প্রচেষ্টা দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে জোটের অন্যতম প্রধান শরিক বিএনপি। বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা, আরেকটি ওয়ান ইলেভেন আনার জন্যই কি এদের জড়ো করা হচ্ছে।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, দলটির নেতারা যতটা না ঐক্যে সুশীলদের আনতে আগ্রহী, তারচেয়ে বেশি আগ্রহী ড. কামাল হোসেন। আর ড. কামাল হোসেন যেহেতু এরই মধ্যে ঐক্যের অঘোষিত নেতায় পরিণত হয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলও যেহেতু ড. কামালকে নেতৃত্বে দেখতে চাইছে, তাই এ নিয়ে উচ্চবাচ্যও করতে পারছে না। আর ড. কামাল তাঁর মনমতোই ঐক্যফ্রন্টকে সাজানোয় আগ্রহী, এ বিষয়ে তিনি বিএনপি নেতাদের কোনো মন্তব্য বা সুপারিশ নিতে আগ্রহী নন।
আজ চট্টগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে বিমানযোগে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। ওই সময় তাঁর সঙ্গী ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই সময় ড. কামাল বিএনপি মহাসচিবকে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন আমি পার্টির বুদ্ধিজীবীদের চাইনা। স্পষ্টতই তিনি ড. ইমাজউদ্দিন আহমেদ বা ড. মাহবুব উল্লাহর মতো বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের দিকে ইঙ্গিত করেই কথাটি বলেছিলেন। বরং, যে সমস্ত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আওয়ামী লীগ বিএনপি দুই দলের ব্যাপারেই নেতিবাচক মনোভাবের জন্য পরিচিত, তাঁদেরই দলে ভেড়াতে চান ড. কামাল।
উল্লেখ্য, এই বুদ্ধিজীবীরা ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন প্রবর্তনের ক্ষেত্রে মূল পরিকল্পনাকারী ছিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে। তাঁদেরই আবার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ড. কামাল ও জাফরুল্লাহর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। সুশীল সমাজের এই প্রতিনিধিরা ঐক্যফ্রন্টে ভিড়লে বিএনপির কী হবে এটাই এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন।
ড. কামাল হোসেন ঘনিষ্ঠরা বলেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ঐক্যফ্রন্টে ভেড়ানোর অন্যতম কারণ হলো, এর চেহারা যেন কোনোভাবেই বিএনপির মতো না মনে হয়। ঐক্য যেন বিএনপির বর্ধিত রূপ বলে জনগণের কাছে প্রতীয়মান না হয়, সে কারণেই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁদের ঐক্যে ভেড়াতে পারলে, দলগত ভাবে বিএনপি ঐক্যে থাকলেও এর অবয়বটা হবে সুশীলদের নিয়ন্ত্রিত। আর এটিই তাঁদের লক্ষ্য।