নির্বাচন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যয় কত ধরা হয়েছে জানেন?

একাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে অংশগ্রহণমূলক ভোটগ্রহণের সম্ভাবনার মধ্যে ৭০২ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতি আসনের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

৭০২ কোটি টাকার মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যয় ৪০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। তারপরও ১৪৭ আসনে ভোটগ্রহণের জন্য ব্যয় হয় ৩৩৩ কোটি টাকার ওপরে। প্রতি আসনের জন্য গড় ব্যয় দুই কোটি ২৬ লাখ টাকার কাছাকাছি।

নির্বাচন কর্মকর্তা বলছেন, গত পাঁচ বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার সঙ্গে তুলনা করলে এই বাজেট গত নির্বাচনের চেয়ে কম। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা খাতে এবার বরাদ্দ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। নির্বাচনের বাজেট নিয়ে করা আজকের একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসছে।

কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারদের ভাতা ছিল তিন হাজার টাকা করে। এবার তা চার হাজার টাকা করা হয়েছে। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের ভাতা ছিল দুই হাজার টাকা করে। এবার করা হয়েছে তিন হাজার টাকা।

পোলিং অফিসারদের ভাতা ছিল দেড় হাজার হাজার টাকা করে। এবার তা দুই হাজার টাকা করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে মালামাল পরিবহনের ব্যয় ছিল দুই হাজার টাকা করে। এবার তা তিন হাজার টাকা করা হয়েছে।

ভোটকেন্দ্রের বেষ্টনী, অস্থায়ী ভোট কেন্দ্র ও অস্থায়ী ভোট স্থাপনের ব্যয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তবে কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা কম থাকায় এ খাতে ব্যয়ও কিছুটা কমে আসে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা নির্বাচনী বাজেট নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৪০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রাখা হয় পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি, সশস্ত্র বাহিনী ও কোস্ট গার্ডের জন্য।

তবে ১৫৪টি আসনে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন না থাকায় ব্যয় কিছুটা কমে ৩৩৩ কোটি সাত লাখ ৭৬ হাজার ৯৬ টাকায় দাঁড়ায়। নির্বাচন পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ ব্যয় ছিল ১৩৩ কোটি ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪৬৫ টাকা। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যয় ছিল ১৯৯ কোটি ৯৩ লাখ আট হাজার ৬৩১ টাকা।

দশম সংসদ নির্বাচনের এই ব্যয় সম্পর্কে ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ওই নির্বাচনে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশি ব্যয় হয়। যেমন-ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স ও অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানোর জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল তা অন্য নির্বাচনে হয়নি।

জানা যায়, অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিকূল অবস্থার কারণে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচন পরিচালনা ব্যয়ের চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যয় হয়েছিল প্রায় চার গুণ বেশি।

অন্যদিকে সবার অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের নির্বাচনগুলোয় নির্বাচন পরিচালনার ব্যয়ের চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যয় ছিল দ্বিগুণ বা তারও কম।

কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় ছিল সাত কোটি ৬২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০১ টাকা। অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যয় ছিল ২৯ কোটি ৪১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৯ টাকা।

অথচ ওই নির্বাচনের কয়েক মাস পর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় যেখানে ছিল ১১ কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার ৩৪৭ টাকা সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যয় ছিল ১৮ কোটি ৭৯ লাখ এক হাজার টাকা।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় ছিল ৩০ কোটি ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫৮ টাকা। অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যয় ছিল ৪২ কোটি সাত লাখ ৮৩ হাজার ৩৬২ টাকা।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় ছিল ৬৭ কোটি ২১ লাখ চার হাজার ৬৭২ টাকা। অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যয় ছিল ৯৭ কোটি ৭৯ লাখ ৪৬ হাজার ১৪ টাকা।

শেয়ার করুন: