শক্তিশালী হচ্ছে ‘তিতলি’, দুপুরে আঘাত হানতে পারে খুলনায়

ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ আরো প্রবল ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে চলেছে। দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ভারত উপকূলে আঘাতের পর আজ বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরের দিকে খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল বিকেল থেকে সারা দেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)।

আবহাওয়া অফিসের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় তিতলি প্রবল আকার ধারণ করে শক্তিশালী হয়ে ভারতীয় উপকূলের দিকে যাচ্ছে। এটি ওড়িশা ও অন্ধ্র প্রদেশের দিকে যাচ্ছে। ভারত উপকূলে আঘাতের পর তা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে আঘাত হানতে পারে।

আবহাওয়া অফিসের বিশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় তিতলি প্রবল আকারে বিস্তৃতি লাভ করে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এ ছাড়া কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে,

মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। গত রাতে খুলনা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে ১২০-১৪০ কিলোমিটার হচ্ছে।

খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ বলেন, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় তিতলি মোংলা বন্দর থেকে দক্ষিণে অবস্থান করছিল। বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরে দুপুর নাগাদ খুলনা ও সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ সময় ভারি ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় গতকাল দুপুরে খুলনা জেলার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সভা করে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলায় ২৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার কথা জানানো হয়।

জেলা ও উপজেলায় মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা প্রস্তুত আছেন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, সরকারি, বেসরকারি সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা সতর্ক আছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বর ০৪১-৭২০৩৬৯।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) গত রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তিতলির প্রভাবে বাঁধ ভেঙে জানমাল, ফসল ও অন্যান্য অবকাঠামোসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এবং দুর্যোগ-পরবর্তী সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বোর্ডের চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল ও খুলনা জোনের মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সদর দপ্তর ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপত্কালীন সময়ে তাদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।

শেয়ার করুন: