২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর তাঁরা প্রত্যেকেই প্রতিবাদ করেছিলেন। এদের একজন ঘটনাস্থল বঙ্গবন্ধু এভিন্যুতে ছিলেন। তাঁর শরীরেও স্প্রিন্টার লেগেছিল। এরা সবাই বলেছিলেন, ‘এটা জঘন্য ঘটনা। এর সুষ্ঠু বিচার হওয়া প্রয়োজন। অথচ ঘটনাচক্রে আজ গ্রেনেড হামলার রায়ের দিন এরা নীরব। যেই বিএনপির নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটেছিল সেই বিএনপির অনুকম্পার অপেক্ষায় এরা। সন্ত্রাসের রক্ত হাতে যে বিএনপির সেইআজ তাঁরা নীরব
আজ বুধবার রায়ের পর ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, এই রায় নিয়ে আমি এখন মন্তব্য করতে পারবো না। আমি রায় পড়িনি।’ অথচ এই কামাল হোসেনই ২২ আগস্ট এক বিবৃতিতে ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। ঐ বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোনো ভাবেই সরকার এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।’ ড. কামাল হোসেন তাঁর বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘ এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে।’
বর্তমানে যুক্তফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ২০০৪ সালে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংঘঠনিক সম্পাদক। গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ২৭ আগস্ট নাগরিক শোকসভায় বক্তব্য রাখেন মান্না। সেখানে তিনি এই নৃশংস ঘটনার জন্যে জামাত বিএনপিকে দায়ী করেন। মান্না এই শোকসভায় ‘অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। অথচ আজ রায়ের দিন তিনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন। রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য নাই তাঁর। ২০০৪ সালে মান্না গ্রেনেড হামলার জন্য যাদেরকে দায়ী করেছিলেন, ২০১৮ তে তাঁদের সঙ্গে ঐক্য গড়তে মরিয়া।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাস্থলেই ছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। সে সময় তিনিও মান্নার মতো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ঘটনার পর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় সুলতান এটাকে সরকারের ইঙ্গিতেই সংগঠিত একটি ফ্যাসিস্ট তৎপরতা বলে অভিহিত করেছিলেন। ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভায় সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেছিলেন,’২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য বিএনপিকে চরম মূল্য দিতে হবে।’ তিনি ঐ সভায় আরও বলেন,‘সরকারের মদদ ছাড়া এরকম ঘটনা ঘটতে পারে না।’ অথচ আজ রায়ের দিন তিনি নীরব। রায় নিয়ে তিনিও কোনো মন্তব্য করেন নি। তিনি ব্যস্ত আগামীকাল সন্ধ্যায় ড. কামাল হোসেনের বাসভবনে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তু নির্ধারণে।
যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া জনগণকে নতুন ধরনের রাজনীতি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ক্ষমতার মোহে যাঁরা নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দেয়, তাঁদের আদর্শ নিয়েই কি প্রশ্ন ওঠে না।’