যেখানে আর দশজন ভাত খেয়ে বেঁচে আছে, সেখানে জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত ভাত না খেয়েই দিব্যি জীবনযাপন করছেন এক কিশোর।
তার নাম মুত্তাকার রাব্বি নিবিড়। ১৬ বছরের এই কিশোরের বাড়ি ময়মনসিংহের বাঘমারায়। বাবা মো. মহসিন মিয়া (নয়ন) এবং মা রুকসানা পারভীন (রুমা)। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে চতুর্থ সন্তান।
আর সবার মতো সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবেই তার জন্ম। জন্মের পর তার কোনো সমস্যাই ছিলো না। সমস্যা শুরু হয় 'মুখে ভাত' অনুষ্ঠানে। সবাই যখন তার মুখে প্রথমবার ভাত দিতে যায়, তখন সে মুখে ভাত দিলেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয় এবং বমি করে ফেলে।
পরিবারের লোকজন ভাবে আরেকটু বড় হোক তখন ভাত খাওয়ানো যাবে। দুই বছর পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খেয়েই বড় হয় সে। এরপর তাকে আবার ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা শুরু করে পরিবারের লোকজন।
কিন্তু তখনো সে ভাত খেতে চায় না। জোর করে ভাত খাওয়াতে গেলেই বমি করে দেয়। যদিও পরিবারের কেউ আর তাকে ভাত খাওয়ানোর তেমন একটা চেষ্টা করেনি।
ভাতের বিকল্পে তাকে সুজি খাওয়ানো শুরু করা হয়। ৫-৬ বছর পর্যন্ত শুধু সুজি খেয়েই পার করে সে। হঠাৎ একদিন বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। এদিকে বয়স যত বাড়ছে, খাবারের চাহিদাও বাড়ছিল তার।
সেজন্য তখন থেকে সুজির বদলে তাকে দুধ, কলা, চিড়া, সেমাই ও সুজির বরফি দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি তাকে ভাতও দেওয়া হতো, কিন্তু সে ভাত না খেয়ে থালায় থুতু দিয়ে ফেলে দিত। এভাবে দেখতে দেখতে তার বয়স ১২ তে পা রাখে।
হঠাৎ একদিন এক আত্মীয়ের বিয়েতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার মা তাকে পোলাও এবং মাংস ভরা একটি থালা তার সামনে দেয়। সে অল্প কিছু পোলাও এবং মাংস খায় সেখান থেকে।
এরপর থেকে বাসায় তাকে পোলাও এবং মাংস রান্না করে দেওয়া শুরু হয়। সাথে চিড়া, রুটি, মুড়ি এবং বাইরের বিভিন্ন খাবার সে খাওয়া শুরু করে।
তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, পরিবারের বড় ভাইয়েরা তাকে না খাইয়ে দু'দিন আটকে রাখে, অনেক মারধরও করে; যাতে করে সে ভাত খায়। কিন্তু এতকিছুর পরেও সে ভাত খায়নি।
অবশেষে তাকে তার মতো করেই খেতে দেওয়া হয়। তার যা ভালো লাগে, তা সে খায়। দেখতে দেখতে এখন সেই ছোট্ট ছেলেটি ১৬ বছরের কিশোর। নিয়মিত ব্যায়াম, শরীরচর্চা এবং খেলাধুলার মাধ্যমে সে সুস্বাস্থের অধিকারী।
বর্তমানেও তার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকে, সকালে রুটি ও ডিম ভাজি। দুপুরে মাংস, পোলাও অথবা মাংসের ঝোল এবং মুড়ি। এছাড়া ফাস্টফুড, চাইনিজ সব ধরনের খাবার খায় সে। শুধু ভাত এবং খিঁচুড়ি খায় না।