‘আদর্শ আর কাপড়ে আমি কখনো দাগ লাগতে দিই না’- কাপর ধোয়ার পাউডার রিনের বিজ্ঞাপনের সংলাপটি ভাইরাল হয়েছে। বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করেছেন অমিতাভ রেজা। আর বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর থেকে তারকা বনে গেছেন এই সংলাপ বলা সারাহ আলম। নাম লিখিয়েছেন চলচ্চিত্রেও। তিনি মুখোমুখি হয়েছেন।
শুরুটা কীভাবে? সারাহ আলম: শোবিজে খুব বেশি কাজ করা হয়নি। সবে তিনটি বিজ্ঞাপন। অমিতাভ রেজার সহকারী নিধি প্রথম টিভিসির জন্য ডাকে। প্রথম কাজ ছিল ‘স্যাভলন ফ্রিডম স্যানিটারি ন্যাপকিন’ এর। ওই বিজ্ঞাপনের ভিজ্যুয়ালে মুখ দেখা যায়নি।
তবে বিলবোর্ডে দেখা মিলেছে। সারা বাংলাদেশ ছেয়ে গিয়েছিল ছবিতে। এরপর টেলিটকের ‘অপরাজিতা’। অমিতাভ রেজা নিজেই অডিশনের জন্য ডাকলেন। বিজ্ঞাপনটির জন্য একদম বাঙালিয়ানা একটি ফেস দরকার। অনেকের মধ্যে আমার লুকটা পছন্দ হলো। তৃতীয়টি রিনের ভাইরাল হওয়া বিজ্ঞাপনটি।
ভাইরালের সঙ্গে প্রশংসাও তো পাচ্ছেন… বন্ধু কিংবা অফিস সহকারীরা তো আছেই, রাস্তায় দেখা হলে অনেকেই এখন এই সংলাপ শোনাচ্ছে; এমনকি অনলাইনেও। ফেসবুকের ইনবক্সে প্রচুর মেসেজ পাচ্ছি, আচ্ছা তুমি কি আদর্শ আর কাপড়ে দাগ লাগতে দাও না?
বিজ্ঞাপনচিত্রটি সর্বসাধারণ গ্রহণ করেছে, এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, এখন তার ফল পাচ্ছি। আর নির্মাতা অমিতাভ (রেজা) ভাইকে ধন্যবাদ, তিনি এমন একটি কাজে আমাকে যোগ্য মনে করেছেন।
অমিতাভ ভাইয়ের কাজ এত গোছানো! ওখানে কোনো কিছু নিয়েই আমাকে চিন্তা করতে হয় না। কস্টিউম সেট রেডি, ট্রায়াল আগেই দেওয়া থাকে। অসাধারণ একটা টিম তাঁর, তাঁদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ।
অনেকেই বলে বিজ্ঞাপনের ‘শাড়ি পড়া’ মেয়েটা। ‘শাড়ি পড়া’ মেয়েটা বাস্তবে কেমন? এমনতিতেও শাড়ি প্রচুর পড়া হয়। তবে শাড়ি পড়ার যে ঝামেলাটা হয়। সেটা সবসময় নেওয়া হয় না। তাই হয়তো টিশার্ট, ট্রাউজারই বেশি পড়া হয়। তবে কোন অকেশন পেলেই শাড়ি পরতে পছন্দ করি।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা কোথায়? ঢাকাতেই। তবে বাবার চাকরির সুবাধে ঢাকার বাইরেও অনেকটা সময় থাকা হয়েছে।
রেডিও জকি হওয়ার গল্প কী? ২০১১ সাল থেকে আরজে হিসেবে কাজ শুরু। তখন সবে কলেজ স্টুডেন্ট। বন্ধুরাই উৎসাহ দেয় সিভি ড্রপের জন্য। বন্ধুরাই সিভি ড্রপ করে দেয়। পিপলস রেডিওতে প্রথম কাজের সুযোগ। বয়সে ওই রেডিওতে সবচেয়ে ছোট ছিলেন। ওখানে দুই বছর চাকরি করা হয়। সেখান থেকে এমটিভি বাংলাদেশে আসে দুই বছরের জন্য।
পরীক্ষামূলক সম্প্রচারের জন্য। সেখানে ডিজে হিসেবে আবেদন করি। ওখানেও দুই বছর ছিলাম। সেখান থেকে যোগ দেয়া হয় রেডিও ফূর্তিতে। বর্তমানে রেডিও ফূর্তিতেই কাজ করা হয়। শোয়ের নির্ধারিত সময় থাকলেও প্রগ্রামের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে আছি। সে হিসেবে দিনে আট থেকে নয় ঘন্টা রেডিওতেই সময় দেয়া হয়। পাশাপাশি পড়াশুনা করছি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে।
অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত কিভাবে? অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘বেঙ্গলি বিউটি’ সিনেমার মাধ্যমেই। সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতা রাশান নূর আমার ‘লা লা লা’ নামে রেডিওর একটি শোতে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। তখন সিনেমাটির স্ক্রিপ্ট রেডি। তিনি বললেন আচ্ছা তুমি এই চরিত্রটার জন্য অডিশন দিয়ে দেখ। সেখান থেকে সিনেমায়।
বাস্তবেও আমি একজন আরজে। সিনেমাটিতেও আরজের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে। মিতা রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেছি। যিনি সত্তর দশকে বাংলাদেশ বেতারে ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক’র শো করতেন। ওখানে তিনি আরজে ছিলেন। ‘নন্দিত নরকে’ র মতো বেশ কিছু সিনেমাতেও তিনি অভিনয় করেছেন। সে খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।
তার মতো বোল্ড ও শক্তিশালি একটি চরিত্র ফুটিয়ে তোলা আমার জন্য বেশ কষ্টসাধ্যই ছিল বলা চলে। শুটিং পূর্ববর্তী সময়ে অনেক সময় দিতে হয়েছে। নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়েছে। তার ভিডিও দেখা হয়েছে। তার কথা বলার ধরণ, শরীরীভাষা এগুলোপ রপ্ত করতে হয়েছে। কিভাবে হাসেন, কিভাবে সংলাপ বলতেন। এগুলো সব পুরনো ভিডিও দেখে শেখা।
শুটিংয়ের মজার কোনো অভিজ্ঞতা? শুটিংয়ের সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা ছিল খাবার। এফডিসির খাবার খুবই সুস্বাদু ছিল। সবার চেয়ে আমি বেশি খেয়ে ফেলতাম। আর এই সিনেমার প্রত্যেকটা মানুষ অনেক ডেডিকেটেড ছিলেন। তারা সিনেমাটির গল্পের জন্য সব করতে প্রস্তুত ছিল।
অভিনয় নিয়ে ভবিষ্যৎ ভাবনা কী? অভিনয়ের ইচ্ছে সিনেমাতেই। অপেক্ষায় ভালো কোন স্ক্রিপ্টের। তবে নাটকেও যে অভিনয় করবো না এমনটা নয়। ইউনিক কিছু পেলে অবশ্যই করবো।
নিজেকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? অভিনয়টাই নিয়মিত করার ইচ্ছে। এছাড়া আমি যেহেতু পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করছি। পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কিছু করার চেষ্টা থাকবে। এছাড়া ঘোরাঘুরি করতে ভীষণ পছন্দ করি। অনেক অনেক ভ্রমন করা হয়।
বাংলাদেশের খুব কম জায়গাই আছে যে আমার পদচারনা নেই। বিশেষ করে সিলেটে। হুটহাট ব্যাগ প্যাক করে চলে যাওয়া হয়। বিদেশে ট্রাভেলের খুব ইচ্ছে আছে। নেপালে যাওয়া হয়েছে। পাহাড় অনেক পছন্দ। স্বপ্ন আছে বিশ্বের আরও অনেক অনেক দেশ ঘুরে বেড়ানো।
শৈশবে কেমন ছিলেন? খুবই শান্তশিষ্ঠ মেয়ে ছিলাম। সবকিছু নিয়ম মেনে চলা হতো। সারাদিন বাসায় পড়াশুনা করতাম। টিচারদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি মার্কসটা কীভাবে পাওয়া যায়। সেই ভাবনাতেই থাকতাম। ক্লাস শেষে আবার বাসায় এসে বই নিয়ে বসে যেতাম। মাঝেমধ্যে গল্পের বইও পড়া হত। আকাআঁকিটাও চলতো নিয়মিত। তবে সেটা অনেকদিন হচ্ছে না।