খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে আনায় ‘পেশেন্ট রাইটস বা রোগীর অধিকার’ হরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, পাশাপাশি মেডিকেল বোর্ড গঠনে আদালতের নির্দেশনা অবমাননা করা হয়েছে। শনিবার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর এসব কথা বলেন। ডা. জাহিদ বলেন, যে কোনো রোগীর নিজের পছন্দমতো চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেয়ার অধিকার রয়েছে।
নিজের ইচ্ছামতো হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু তার নিজের পছন্দের চিকিৎসকের কাছে তাকে চিকিৎসা নিতে দেয়া হচ্ছে না। এটা রোগীর অধিকার হরণ। অধ্যাপক জাহিদ বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যে বোর্ড গঠন করা হয়েছে সেখানে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। কারণ বোর্ডের তিনজন সদস্য স্বাচিপের আজীবন সদস্য। অথচ আদালত অরাজনৈতিক চিকিৎসকদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বোর্ডে একজন চিকিৎসক আছেন যিনি এর আগে বিএনপির মহাসচিবের বিষয়ে আদালতে ‘রং স্টেটমেন্ট’ দিয়েছিলেন। বিএনপি মহাসচিবের হার্টে রিং পরানো আছে, যার ঘাড়ে অস্ত্রোপচার করা রয়েছে। যার শরীরে স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচল হয় না, এমন ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা নিয়ে ওই চিকিৎসক স্টেটমেন্টে লিখেছিলেন ‘সুস্থ ও স্বাভাবিক’।
পরে এ নিয়ে আপিল করা হলে তাকে পরিবর্তন করা হয়। এমনকি সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহাকে অসুস্থ বানিয়ে বিদেশে পাঠানোর পেছনেও এই চিকিৎসকের হাত রয়েছে। তার অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কতটা নিরাপদ সেটা ভাবার বিষয়। ডা. জাহিদ বলেন, খালেদা জিয়ার দুই পায়ের নি রিপলেসমেন্ট হয়েছে। তার চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এসব সবারই জানা। বিএসএমএমইউতে নি রিপলেসমেন্ট চিকিৎসা শুরু হয়েছে কয়েক দিন হলো।
তাই আমাদের দাবি ছিল একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে যেন তার চিকিৎসা হয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার পছন্দের চিকিৎসকদের দিয়ে তার চিকিৎসা করানোর কথা। অথচ আমার যারা তার দীর্ঘদিনের চিকিৎসক, আমাদের তার কাছে যেতে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, তার মতো একজন রোগীর চিকিৎসার বিষয়টি যেন রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকে। এর আগে, দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য আদালতের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়।
বেলা ৩টা ১১ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি কারাগার থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হয়। বিকাল ৩টা ৪১ মিনিটে গাড়িটি হাসপাতালের গেটে পৌঁছায়। বিএসএমএমইউতে ভর্তির পর মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল জলিল চৌধুরী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেন। রোববার দুপুর ১টায় মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্য আলোচনার মাধ্যমে তার চিকিৎসা শুরু করবেন।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিএসএমএমইউতে দুটি কেবিন দুপুর থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। খালেদা জিয়া ৬১২ নম্বর কেবিনে থাকলেও তার জন্য পাশের ৬১১ নম্বর কেবিনটিও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ওই কক্ষে তার সহকারী বা কারা নিরাপত্তারক্ষীরা থাকতে পারবেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনার আগে দুপুরে তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র হাসপাতালে আনা হয়। বিকাল ৩টার পর খালেদাকে নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে পুলিশের একটি গাড়ি। এর সামনে পেছনে ছিল পুলিশ, র্যাবের বেশ কয়েকটি গাড়ি। একটি অ্যাম্বুলেন্সও ছিল গাড়িবহরে।
খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করার সময় রাজধানীর কেন্দ্রীয় কারাগার, পুরান ঢাকা, আলিয়া মাদ্রাসা চত্বরসহ আশপাশের এলাকায় কয়েকস্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়েছিল। তখন তার শরীরের কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা পুনরায় জেলাখানায় পাঠানো হয়। তার ছয় মাস পর শনিবার তাকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে ভর্তি হলো।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া এখন কারাগারে বন্দি। ৫ বছরের দণ্ড নিয়ে তিনি নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।