গান্ধীকে যে কারণে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি

শান্তি ও অহিংসার প্রতীক হিসেবে অভিহিত করা হয় গৌতম বুদ্ধকে। মহামানব বুদ্ধের জম্মে র আড়াই হাজার বছর পর ভারতবর্ষে জম্মে ছিলেন শান্তি ও অহিংসার এক প্রবাদপুরুষ। নাম তার মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী।

ভারতের রাষ্ট্রপিতা হিসেবে শ্রদ্ধা করা হয় তাকে। রাজনীতিক হিসেবে বিশ্বজুড়ে নন্দিত হলেও মহাত্মা গান্ধী ছিলেন ক্ষমতাবিমুখ এক মানুষ। স্বাধীন ভারতের প্রতিষ্ঠাতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোনো রাষ্ট্রীয় পদ গ্রহণ করেননি। ব্যক্তি জীবনেও তিনি ছিলেন এমনই নির্মোহ যাকে কল্পকথার অতিমানবদের সঙ্গেই তুলনা করা যায়।

বলা হয়, ভগবান বুদ্ধ ও যীশুখ্রিস্টের পর পৃথিবীর মাটিতে যদি অহিংসা ও শান্তির কোনো মানুষবেশী দেবদূতের আগমন হয়ে থাকে, তবে তা মহাত্মা গান্ধীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শান্তির জন্য তিনি নিজের জীবনকেও উৎসর্গ করেন।

স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রপিতা মহাত্মা করমচাঁদ গান্ধীকে হত্যা করেছিল হিংসা ও সাম্প্রদায়িকতার ঘৃণ্য প্রতিভূরা। ভারত স্বাধীন হওয়ার ৫ মাস ১৩ দিন পর হিন্দুত্ববাদীদের হাতে নিহত হন মানবতার এই বরপুত্র।

মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুর পর মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইন মন্তব্য করেছিলেন, ‘কয়েক যুগ কেটে যাবে, তবু মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন হবে যে, এমন একজন মানুষ রক্ত-মাংসের শরীরে সত্যিই এসেছিলেন, চলাফেরা করেছিলেন মাটির পৃথিবীতে।’ মহাত্মা গান্ধী ছিলেন সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পূজারি। অসত্য, অসুন্দর ও অকল্যাণকে তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন।

রাজনীতিক হিসেবে অনেকের সঙ্গেই তার দ্বিমত ছিল, কিন্তু প্রতিপক্ষের কাছেও তিনি তার বিশাল হৃদয় এবং সত্য সুন্দর কল্যাণের প্রতি অসামান্য নিষ্ঠার জন্য ‘মহাত্মা’ হিসেবে সম্বোধিত হতেন।

মহাত্মা গান্ধী তার আত্মকথায় বলেছেন, ‘সত্য ছাড়া অন্য কোনো ঈশ্বর আছেন তা আমি অনুভব করিনি। সত্যময় হওয়ার যাত্রাপথে অহিংসা একটি অবলম্বন।’ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি অহিংসার বাণী প্রচার করেছেন।

মহাত্মা গান্ধীর জম্ম গুজরাটের কাথিয়ারে। কাথিয়ার ছিল করদ রাজ্য। গান্ধীজীর বাবা ছিলেন মহারাজের দেওয়ান। অর্থাৎ পদস্থ রাজকর্মকর্তা। ছোটবেলা থেকেই সত্যের প্রতি ছিল গান্ধীর অসামান্য পক্ষপাতিত্ব। তিনি যখন স্কুলছাত্র তখন একবার এক ইংরেজ ইন্সপেক্টর আসেন স্কুল পরিদর্শনে।

ছাত্ররা কেমন পড়াশোনা করছে তা তিনি যাচাই করতে চাইলেন। ক্লাসে ঢুকেই ইংরেজ ইন্সপেক্টর মি. জাইলস ছাত্রদের কয়েকটি ইংরেজি শব্দের বানান লিখতে বললেন। এর মধ্যে একটি ছিল কবঃঃষব। মহাত্মা গান্ধী এ বানানটি ভুল লেখেন। বিষয়টি ক্লাস শিক্ষকের চোখে পড়ে।

তিনি ইশারায় গান্ধীকে সামনের ছাত্রের শ্লেট থেকে শুদ্ধ বানানটি দেখে নিতে বলেন। গান্ধী তাতে প্রলুব্ধ হননি। ফলে যা হওয়ার তাই হলো। দেখা গেল, গান্ধী ছাড়া আর সবার সবকটি বানান শুদ্ধ হয়েছে। পরে শিক্ষক গান্ধীকে এক হাত নেয়ার চেষ্টা করেন।

তিনি যে কত বোকা সেটি প্রতিপন্নের চেষ্টা করেন ক্লাসভর্তি ছাত্রদের সামনে। এ অপমানে গান্ধী বিচলিত হননি। বরং শিক্ষক তাকে নকল করে শুদ্ধ লেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করায় দুঃখ পেয়েছিলেন। গান্ধীজী দেশে পড়াশোনা শেষে ইংল্যান্ডে যান।

ব্যারিস্টারি পড়ার পর কর্মজীবন শুরু করেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল ভারতবর্ষের মতোই ব্রিটিশ উপনিবেশ। সে দেশে তখন ১০ লাখ ভারতীয় বাস করতেন। ব্রিটিশরা তাদের নিয়ে গিয়েছিল কুলি হিসেবে।

তবে এ ভারতীয়রা তাদের কর্মতৎপরতায় দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজজীবনে স্থান করে নেয়। বিশেষত ব্যবসায়-বাণিজ্যে তারা প্রাধান্য বিস্তার করে। দক্ষিণ আফ্রিকার আদিবাসী ১৪টি প্রধান উপজাতির মধ্যে জুলুরা ছিল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং প্রভাবশালী।

এরপরই ছিল কখোজাই উপজাতির স্থান। ভারতীয়রা মূলত বসবাস করত জুলু প্রধান নাটাল প্রদেশে। জুলুরা ভারতীয়দের দেখত ঘৃণার চোখে। তাদের সে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিল তারা।

গান্ধীজী দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে বুঝলেন আইনি সহায়তা দিয়ে ভারতীয়দের খুব বেশি উপকার করা যাবে না। তিনি জুলুদের আস্থা অর্জনের পদক্ষেপ নেন। এ ক্ষেত্রে তার অস্ত্র ছিল শান্তি, অহিংসা আর সত্যগ্রহ। তিনি আইনের প্যাঁচে ফেলে জুলুদের জব্দ করার বদলে তাদের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়ান। ইতিমধ্যে শুরু হয় ইংরেজদের সঙ্গে জুলুদের বুয়র যুদ্ধ।

এ যুদ্ধে গান্ধীজী আহত জুলুদের সেবায় অনন্য অবদান রাখেন। তিনি ভারতীয়দের নিয়ে কমিটি গঠন করেন। যারা স্ট্রেচার করে আহতদের পৌঁছে দিত হাসপাতালে।

বলা হয়, গান্ধীজী নিজে একাই প্রায় এক হাজার জুলুকে স্ট্রেচার করে হাসপাতালে পৌঁছে দেন। তার এই ভালোবাসার মন্ত্র কাজে লাগে। জুলুরা এক সময় ভারতীয়দের ঘৃণার চোখে দেখলেও তাদের মনোভাবে পরিবর্তন আসে।

বলা হয়, গান্ধীজীর কার্যক্রম দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। নেলসন ম্যান্ডেলাকে ভাবা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তি আন্দোলনের মহান নেতা। ম্যান্ডেলার এ পর্যায়ে উঠে আসার পেছনে গান্ধী আদর্শের ভূমিকা ছিল।

ম্যান্ডেলা হলেন দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজাতি কখোজাইর সদস্য। জুলু উপজাতির সঙ্গে কখোজাইদের দ্বন্দ্ব সুবিদিত। কিন্তু তারপরও ম্যান্ডেলা শান্তি ও অহিংসার পথ ধরে জুলুসহ সব আফ্রিকানের মন জয় করতে সক্ষম হন।

এমনকি বিবেকবান শ্বেতাঙ্গরা ছিল তার পক্ষে। স্মর্তব্য যে, দক্ষিণ আফ্রিকার কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর ম্যান্ডেলা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশ তাকে গান্ধীর অহিংস পথে দক্ষিণ আফ্রিকার সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন।

মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় দীর্ঘ ২৫ বছর অবস্থান করেন। সে দেশের ভারতীয়দের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে সক্ষম হন তিনি। আফ্রিকানদের মধ্যেও ছিল তার অসামান্য জনপ্রিয়তা।

বিস্ময়কর হলেও সত্যি, দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধী অহিংসার যে রাজনীতি শুরু করেন তা ভারতবর্ষেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এ দেশের হিন্দু, মুসলমান নেতারা তাকে নিজেদের মধ্যে পেতে চান।

তাদের ডাকেই ১৯১৫ সালে মহাত্মা দেশে ফিরে আসেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রবাদপুরুষ হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। মহাত্মা গান্ধীকে বলা হয় অহিংসা তথা শান্তির মূর্তপ্রতীক।

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তার নাম পাঁচবার মনোনয়ন দেওয়া হয়। প্রতিবারই বিশ্ববাসী আশা করেছে মহাত্মা গান্ধীকে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। কিন্তু খোঁড়া যুক্তি তুলে পাঁচবারই তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়নি। গান্ধী তার জীবদ্দশায় দুনিয়াজুড়ে শান্তির অবতার হিসেবে সবার শ্রদ্ধা পেলেও নোবেল ফাউন্ডেশনের বিদগ্ধ গুণীজনদের মন তাতে গলেনি।

নোবেল শান্তি পুরস্কার না পাওয়ার ঘটনা মহাত্মা গান্ধীর মর্যাদায় কোনো হেরফের ঘটায়নি। তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ যিনি কোনো পুরস্কারের জন্য প্রলুব্ধ ছিলেন না। ২০০৭ সালে মহাত্মা গান্ধীর ১৩৮তম জম্ম বার্ষিকী উপলক্ষে নোবেল ফাউন্ডেশনকে এ জন্য তার মৃত্যুর ৫৯ বছর পর দুঃখ করতে হয়েছে।

নোবেল ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল সোহলাম বলেছেন, পাঁচবার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলেও বিশেষ কারণে গান্ধীকে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান এই শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়নি। সে কারণটিও ছিল খুবই অদ্ভুত।

নরওয়ের নোবেল কমিটি নাকি ঠিক করতে পারেনি গান্ধী আসলে একজন রাজনীতিবিদ নাকি মানবাধিকার কর্মী। এ জন্য আক্ষেপও করেছেন নোবেল পুরস্কার কমিটির ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, আমরা একজন অনন্য সাধারণ মানুষকে পুরস্কৃত করার সুযোগ হারিয়েছি।

নোবেল পুরস্কার কমিটি ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে এটি দাবি করার কোনো অবকাশ নেই। তাদের অনেক পুরস্কার নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তবে এ মর্যাদাবান প্রতিষ্ঠানটি কখনো নিজেদের ত্র“টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেনি।

গান্ধীজীর ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। সোহলাম গান্ধীজীর ১৩৮তম জম্ম বার্ষিকী উপলক্ষে স্পষ্টভাবে বলেছেন তাকে পুরস্কৃত করতে না পারায় নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিচ্ছে নোবেল কমিটি।

এ প্রসঙ্গে নোবেল মিউজিয়ামের কিউরেটর অ্যান্ডার্স ব্যারানি একটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নোবেল মিউজিয়ামে যার অনুপস্থিতি আমাদের চোখে পড়ে তিনি গান্ধীই।

নোবেল মিউজিয়ামের বুকে তা এক প্রকা- ফাঁকা জায়গা। মহাত্মার অবশ্যই এখানে স্থান পাওয়া উচিত ছিল। আমার বারবার মনে হয়, বিরাট ভুল হয়ে গেছে।’

মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে দুনিয়ার দেশে দেশে হাজার হাজার পৃষ্ঠা লেখালেখি হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে মানুষ অনুভব করছে অহিংসার প্রয়োজনীয়তা। জাতিসংঘ এ কারণে গান্ধীর জম্ম দিন ২ অক্টোবরকে অহিংস দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, যে দেশের তিনি রাষ্ট্রপিতা সেই ভারতও সহস্রাব্দের এই শ্রেষ্ঠ মানুষটির প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। মহাত্মা গান্ধী জম্ম গ্রহণ করেছিলেন ভারতের গুজরাটে। গুজরাটের পবিত্র মাটিতে তিনি কাটিয়েছেন তার শৈশব-কৈশোর।

অহিংসা ও ভালোবাসার যে পূতঃমন্ত্র তিনি মনুষ্য সমাজে ছড়িয়ে দেন তার সূচনা গুজরাট থেকেই। অথচ তার জম্ম ভূমি গুজরাটে নরেন মোদির মতো হিংসাশ্রয়ী রাজনীতিকের আবির্ভাব ঘটেছে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যিনি মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলা খেলেছেন। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে নৃশংসভাবে।

সন্তানসম্ভবা নারীদের রাস্তায় এনে প্রকাশ্যে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছে। তারপর পেট চিরে গর্ভস্থ শিশুকে বের করে উল্ল­াস করা হয়েছে। জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে জিঘাংসার প্রতিফলন ঘটিয়েছে বিজেপি ও অন্যান্য সাম্প্রদায়িক দলের দুর্বৃত্তরা।

শান্তি ও অহিংসার বরপুত্রের দেশ ভারত স্বদেশের শান্তিকামী মানুষের মুখে ছাই দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতা হিসেবে ভাবা হতো যে দেশটিকে, তারাই এখন ঘৃণা ও অবিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টিতে মদদ জোগাচ্ছে।

মহাত্মা গান্ধী চেয়েছিলেন ভারতবর্ষ অখ- অবয়বে স্বাধীনতা লাভ করুক। উপমহাদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের আস্থার প্রতীকও ছিলেন তিনি। কিন্তু ব্রিটিশদের ইন্ধনে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প এতটাই বিস্তৃত হয়ে পড়ে যে, তা থেকে রেহাই পেতে গান্ধীজীও ভারত বিভাগ মেনে নেন। ১৯৪৭ সালে পাঞ্জাব ও বাংলা বিভাগকে কেন্দ্র করে যে সাম্প্রদায়িক হানাহানি দানা বেঁধে ওঠে, তা থামাতে এই শান্তিকামী নেতা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।

বিশেষত কলকাতা, নোয়াখালীসহ অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন স্থানে দানা বেঁধে ওঠা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থামাতে মহাত্মাজী উভয় সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাণী প্রচার করেন।

১৯৪৭ সালের ১৩ আগস্ট হরিজন সম্প্রদায়ের একটি পাড়ায় এক গরিব মুসলমানের পর্ণকুটিরে তিনি অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে বাংলায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন।

১৫ আগস্ট ভারত বিভক্তির পর দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতার গড়ের মাঠে সারাদিন ধরে দু’ধর্মের লোকজনকে নিয়ে প্রার্থনা সভার আয়োজন করেন।

লাখ লাখ হিন্দু-মুসলমান এ প্রার্থনা সভায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার শপথ নেয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং গান্ধীজীর চেষ্টায় বাংলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

মহাত্মা গান্ধী শান্তি, অহিংসা, সত্য-সুন্দরের পূজারি ছিলেন। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তরে আজ যখন হানাহানি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তখন একজন গান্ধীর প্রয়োজনীয়তা প্রতিনিয়ত অনুভব হচ্ছে। যিনি সংঘাতের বদলে শান্তির মন্ত্র পাঠে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবেন। সত্য, সুন্দর কল্যাণের পথে যাওয়ার জন্য সবার প্রতি আবেদন জানাবেন।

পাদটীকা : মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে লেখাটি শেষ করব তাকে নতুনভাবে আবিষ্কারের একটি ঘটনার কথা বলে। স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী যামিনী রায় চল্লি­শের দশকে গান্ধীজীর একটি ছবি এঁকেছিলেন।

জলরঙের ওই ছবিটি ছিল নির্মল কুমার বসু নামের এক গান্ধী ভক্তের ব্যক্তিগত সংগ্রহে। যামিনী রায়ই তাকে ছবিটি উপহার দেন। নির্মল বসুর ভাইপো রবীন্দ্রনাথ বসু পিতৃব্যের সব স্মৃতি আগলে রেখেছিলেন।

তিনি যামিনী রায়ের আঁকা গান্ধীজীর ছবিটি যথাযথ সংরক্ষণের জন্য পশ্চিমবাংলার প্রত্ন তত্ত্ব সংগ্রহশালায় দান করেন। ছবিটি পেয়ে রাজ্য প্রতœতত্ত্ব সংগ্রহশালার কর্তাব্যক্তিরা বিপাকে পড়লেন।

দেখলেন ছবিতে গান্ধীজী বাম হাতে লিখছেন। যামিনী রায়ের মতো বিশ্ববরেণ্য শিল্পী ভুলভাবে আঁকবেন তা তো হওয়ার কথা নয়। তারা বাম হাতে লেখার রহস্য জানতে গান্ধীজীর নাতি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর শরণাপন্ন হলেন।

তিনি জানালেন অজানা রহস্যের কথা। গান্ধীজী ডান ও বাম হাতে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে লিখতে পারতেন। তিনি ভাবতেন এক হাতে সব কাজ করলে সে হাতটি বিশ্রামের সুযোগ পাবে না। কোনো কারণে হাতটি বিকল হয়ে পড়লে তাকে থমকে যেতে হবে।

যে কারণে তিনি ডান হাতের পাশাপাশি বাম হাত দিয়েও লেখা শুরু করেন। এমনকি কোনো লেখা ডান হাত দিয়ে শুরু করার পর সে হাতে ক্লান্তি এলে বাম হাতে লেখা শুরু করতেন। গান্ধীজী যে ‘সব্যসাচী’ ছিলেন এটি তার প্রমাণও বটে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।

শেয়ার করুন: