বালিশ ও কাথার ভেতর থেকে কামড়াচ্ছে সাপ,আতঙ্কে গ্রামবাসীরা

গরমের দিনে রাস্তা ঘাটে সাধারনত সাপের দেখা বেশি মিলে । আবার মানুষের বসত বাড়িতে বড় সাপ দেখা যায় । তবে এবার এক ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহ জেলার দুইটি গ্রামের আড়াইশোর বেশি মানুষ দাবি করেছেন, তাদের সাপে কামড়েছে।

এরপর সেখানে চিকিৎসকদের একটি দল পাঠিয়ে জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সাপের কামড়ের কোন ঘটনা ঘটেনি, পুরোটাই মানসিক ব্যাপার।এই আতঙ্কটি ছড়িয়েছে ঝিনাইদহের সদর উপজেলার পৈলানপুর এবং পাইকপাড়া গ্রামে।

পৈলানপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোঃ আজাদ হোসেন বলেছেন, ‘ঈদের পর থেকেই দুইটা গ্রাম জুড়ে মানুষের মধ্যে সাপে কামড়ের আতঙ্ক। সবাই খালি বলে সাপে কামড়েছে।

ওঝার কাছে এত মানুষ গেছে, যে তার দম ফেলার সময় নাই।’‘অনেকেরই ঘুম থেকে উঠে অবশ লাগে, মাথা ঘুরায় দেখে মনে করছে তাদের সাপে কামড়েছে। কারও শরীরে দুইটা দাগের মতো আছে, কারো নাই। যারা বলছে, তাদের বেশিরভাগই মহিলা। সবাই খালি ওঝার কাছে ছুটতেছে,’ বলেন তিনি।

তাদের অনেকের অভিযোগ, বালিশ ও কাথার ভেতর থেকে তাদের সাপে কামড়াচ্ছে। ঘটনার শুরু গত ঈদ উল আযহার পর থেকে। সে সময় গ্রামের একজন বাসিন্দা সাপের কামড়ে মারা যায়। সাপটিকে তার মশারির ভেতর দেখতে পেয়ে পিটিয়ে মারেন পরিবারের সদস্যরা।

এরপর থেকেই অনেকে সাপের কামড় খেয়েছেন বলে দাবি করতে থাকেন। আতঙ্কে গ্রামবাসীরা তল্লাশি করে কয়েকটি সাপ খুঁজে বের করে পিটিয়ে মারে। কিন্তু মানুষের মধ্যে সাপের কামড়ের আতঙ্ক কাটেনি। হরিশংকরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাসুম বলছেন, মানুষ সাপের কামড়ের এতো দাবি করলেও, সেরকম কোন চিহ্ন দেখা যায় নি।

তিনি বলছেন, ‘এই আতঙ্কের কথা শোনার পরেই আমি এসব গ্রামে গিয়েছি, আমাদের মেম্বাররা গিয়েছে। ঈদের পর একজন ব্যক্তি সাপের কামড়ে মারা গিয়েছিল, এটা ঠিক। কিন্তু এরপরে আর সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটেনি।’

তিনি বলছেন, ‘মানুষ আতঙ্কে ওঝার কাছে যায়। ব্যবসায়িক কারণেই হোক, আর গুরুত্বের লোভেই হোক, সেও তাদের ঝাড়ফুঁক করে দেয়। কিন্তু এই ব্যক্তিদের পরীক্ষা করে আমরা দেখেছি, আসলে সাপের কামড়ের কোন অস্তিত্ব নেই।’

কিন্তু তা সত্ত্বেও গ্রামটিতে আড়াইশোর বেশি মানুষ দাবি করেছেন, তাদের সাপে কামড়েছে। যদিও তারা কেউ সেই সাপকে চোখে দেখেননি। সাপে কামড় দিলে সেখানে দুইটা দাঁতের দাগ থাকবে। এক্ষেত্রে কি সেরকম চিহ্ন আছে?

পৈলানপুর গ্রামের মোঃ. আজাদ হোসেন বলছেন, ‘কারো কারো দুইটা দাগের মতো আছে, বেশিরভাগেরই নেই। প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি কিভাবে দাগ হলো। পরে বুঝলাম, পোকামাকড়ের কামড়ে সেটা হতে পারে।’

‘আমার ভাইয়ের হাতে দুইটা দাগ দেখা যাওয়ার পরে সেও বলতে লাগলো, আমাকে সাপে কামড়েছে। তখন আমরা বলি, দেখি অপেক্ষা করে কি হয়। কিন্তু তার কিছুই হয়নি।

এরপর থেকে আমাদেরও ভয় কমতে শুরু করেছে।’তিনি বলছেন, যারাই দাবি করেছে যে তাকে সাপে কামড় দিয়েছে, কেউ সেই সাপকে চোখে দেখতে পাননি। ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ রাশেদা সুলতানা বলছেন, এটা পুরোটাই একটা মানসিক ব্যাপার, যেখানে সাপের কামড়ের কোন ব্যাপার নেই।

তিনি বলছেন, ‘খবরটি জানার পর ওই গ্রামে আমাদের মেডিকেল টিম পাঠিয়েছি। প্রথমে একজন মারা গেলেও, পরে যারা দাবি করছেন, তাদের তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন যে আসলে সাপের কামড়ের কোন ঘটনা ঘটেনি।

বরং গ্রামের একজন ওঝা তাদের বিভ্রান্ত করছে। হয়তো সেই ওঝাই কোনভাবে তাদের শরীরে পিন দিয়ে ফুটো করে সাপের কামড়ের দাগ তৈরি করে ভীতি ছড়াচ্ছে।’

‘আমরা ওই ওঝাকে ডেকে সতর্ক করে দেয়ার পর গ্রামের মানুষের মধ্যে এ ধরণের আতঙ্ক অনেক কমে এসেছে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করেছি, কেউ সত্যিই সাপের কামড়ের শিকার হলে হাসপাতালে আসার জন্য, যেন ওঝার কাছে ঝাড়ফুঁক করার জন্য কেউ না যায়।’

এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার, মসজিদের ইমাম ও গ্রামবাসীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি উঠোন বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে সাপের কামড়ের লক্ষণ, কি করতে হবে, কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যাবে,

ওঝার কাছে না যাওয়ার ব্যাপারে গ্রামবাসীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।স্থানীয় মোঃ আজাদ হোসেন বলছেন, গত একটা মাস সবাই খুব সাপের ভয়ে ছিলাম। তবে এখন আস্তে আস্তে ভয় কাটতে শুরু করেছে। আসা করছি সামনে আরও কমে যাবে এ ভয় সবার মন থেকে । তবে তা আরও সময় লাগবে ।

শেয়ার করুন: