এইমাত্র জানা গেল ফাইনালে যে একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে পারে টাইগাররা

শেষবার ২০১৬ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ভারত। আর এরই সাথে পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলে আসার পরেও শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল টাইগারদের।

দুই বছর পর আবারও আরেকটি ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এবারও তাদের প্রতিপক্ষ সেই ভারত। যদিও এবারের টুর্নামেন্টের ফরম্যাটটি ভিন্ন তবে ভিন্নতা নেই ভারতীয় দলের শক্তিমত্তাতে।এবারের এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচেও পরাজিত হয়নি রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারত। সুপার ফোরের একটি ম্যাচে শুধু আফগানিস্তানের বিপক্ষে টাই হয়েছিল তাদের। বাদবাকি সবকয়টি ম্যাচেই সমান দাপট দেখিয়ে গিয়েছে দলটি।

তাই আগামীকাল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালে যে স্পষ্টভাবে ফেভারিট ভারতই থাকছে তা বলাই বাহুল্য। তার ওপর বাংলাদেশকে মাত্র কয়েকদিন আগেই সুপার ফোরের ম্যাচে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল তারা।

তবে ভারত এগিয়ে থাকলেও আত্মবিশ্বাসে খুব বেশি কমতি থাকছে না বাংলাদেশের। কেননা আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে তারা। গতকাল সরফরাজ আহমেদের পাকিস্তানকে ৩৭ রানে হারিয়েছে মাশরাফি বাহিনী।

কিন্তু এরপরেও একটি দুশ্চিন্তা ঠিকই গ্রাস করছে বাংলাদেশ দলকে। আর সেটি হল দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। এখন পর্যন্ত কোন ম্যাচেই নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারেননি ওপেনাররা। তামিম ইকবালের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবেও কাউকে পায়নি দলটি।

সর্বশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে অলিখিত সেমিফাইনাল ম্যাচটিতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন লিটন, সৌম্যরা। মিডল অর্ডারে মুশফিকুর রহিম এবং মোহাম্মদ মিথুন জোড়া অর্ধশতক না হাঁকালেে আজ হয়ত ফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ হতো না তাদের।

সুতরাং আগামীকাল ভারতকে হারাতে হলে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কাঁধে দায়িত্ব থাকছে অনেক বেশি। বলা চলে এই ম্যাচটি সৌম্য- লিটনদের নিজেদের প্রমাণ করার বড় সুযোগ। তার ওপর বাংলাদেশ দলে নেই সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তামিম ইকবালের পর তিনিও এশিয়া কাপ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন গতকালই। বর্তমানে আঙ্গুলের সার্জারির অপেক্ষায় দিন গুনছেন তিনি।

মুদ্রার উল্টো পিঠ অবশ্য ভারতের ক্ষেত্রে। এখন পর্যন্ত ওপেনিং নিয়ে কোন প্রকার সমস্যাতেই পড়তে হয়নি তাদের। শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা মিলে প্রায় প্রতি ম্যাচেই দলকে ভাল শুরু এনে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দলটিতে রয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, হার্দিক পান্ডিয়া কিংবা জাসপ্রিত বুমরাহর মতো তারকা ক্রিকেটাররা। সবমিলিয়ে আগামীকাল ভারতকে নাস্তানাবুদ করতে আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামতে হবে টাইগারদের।

পিচ এবং কন্ডিশন-

পরিসংখ্যান বলছে আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের মতো দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটিও বেশ ব্যাটিং সহায়ক। এই মাঠে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরটি ছিল ইংল্যান্ডের। ২০১৫ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে শুরুতে ব্যাটিং করে ৫ উইকেটে ৩৫৫ রান সংগ্রহ করেছিল ইংলিশরা।

তবে এবারের পিচ কিছুটা ব্যতিক্রম হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ভারতের। হংকংয়ের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ২৮৫ রান সংগ্রহ করেছিল রোহিত শর্মার দল।

এছাড়াও স্টেডিয়ামে ওয়ানডে ফরম্যাটে উইকেট প্রতি গড় রান ২৮.৫৯। এদিকে আবহাওয়া রিপোর্ট বলছে আগামীকাল দুবাইয়ের তাপমাত্রা থাকতে পারে প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপরদিকে আদ্রতা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ২৭ শতাংশ।

মুখোমুখি- এখন পর্যন্ত মোট ৩৪টি ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশ। যেখানে টাইগারদের জয়ের সংখ্যা মাত্র ৫টিতে। অপরদিকে ২৮টিতে জয়ের দেখা পেয়েছে ভারত এবং ১টি ম্যাচে কোন ফলাফল আসেনি।

স্পটলাইটে থাকবেন যারা-

মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)– এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচে ৯৯ রানের ইনিংস খেলে সেরা রান সংগ্রাহকের তালিকার দ্বিতীয়তেও উঠে এসেছেন তিনি। বর্তমানে মুশফিকের সংগ্রহ ৪ ম্যাচে ৭৪.২৫ গড়ে ২৯৭ রান। যেখান রয়েছে ১টি শতক এবং ১টি অর্ধশতক।

ভারতের বিপক্ষেও ব্যাট হাতে পরিসংখ্যান ভাল মুশফিকের। এখন পর্যন্ত ২০টি ম্যাচে ৩৭.৪৩ গড়ে ৫৯৯ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। যেখানে তিনি হাঁকিয়েছেন ১টি শতক এবং ৩টি অর্ধশতক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে ১৪৪ রানে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছিলেন মুশি। এই ইনিংসটিই এবারের এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।

মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)– বল হাতে চলমান এশিয়া কাপে দারুণ ফর্মে আছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। এখন পর্যন্ত মোট ৪টি ম্যাচে ৮ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। সাতক্ষীরার এই পেসার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় আছেন দ্বিতীয়তে। যেখানে তাঁর ইকোনমি রেট ৪.৫৯। পাকিস্তানের বিপক্ষে গত ম্যাচেই ৪৩ রান খরচায় ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এই টাইগার পেসার।

টুর্নামেন্ট ফাইনালিস্ট ভারতের বিপক্ষেও মন্দ নয় ফিজের বোলিং পারফর্মেন্স। ২০১৫ সালে এই ভারতের বিপক্ষেই ৫০ রানে ৫ উইকেট শিকার করে ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এখন পর্যন্ত ভারতের মুখোমুখি লড়াইয়ে ৫ ম্যাচে ১৩টি উইকেট শিকার করেছেন মুস্তাফিজ। যেখানে তাঁর ইকোনমি রেট ৫.৭৪।

রোহিত শর্মা (ভারত)– বর্তমানে বেশ ভাল ফর্মে আছেন এশিয়া কাপে ভিরাট কোহলির পরিবর্তে অধিনায়কত্ব করা রোহিত শর্মা। এই টুর্নামেন্টে এরই মধ্যে ৪ ম্যাচে ২৬৯ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। যেখানে তাঁর ব্যাটিং গড় চোখ কপালে তোলার মতোই। ১৩৪.৫০ গড়ে এই রান করেছেন রোহিত। এবারের এশিয়া কাপে তিনি হাঁকিয়েছেন ১টি শতক এবং ২টি অর্ধশতক।

এদিকে ভারতীয় এই ওপেনারের প্রিয় প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ বললে হয়তো খুব বেশি ভুল হবে না। কারণ এখন পর্যন্ত টাইগারদের বিপক্ষে মোট ১১টি ম্যাচ খেলে ৫৬.৪৪ গড়ে রোহিত রান সংগ্রহ করেছেন ৫০৮। রয়েছে ২টি শতক এবং ২টি অর্ধশতক। সর্বশেষ এশিয়া কাপের ম্যাচেও জ্বলে উঠেছিল তাঁর ব্যাট। সুপার ফোরের সেই ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)– চলমান এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত ৩টি ম্যাচে ৭ উইকেট শিকার করেছেন এই ভারতীয় পেস তারকা। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় তাঁর অবস্থান মুস্তাফিজের পরেই তৃতীয়তে। যদিও তাঁর ইকোনমি রেট ফিজের থেকে কিছুটা ভাল। ৩.৩৭ রেটে বোলিং করেছেন তিনি।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত বুমরাহ ম্যাচ খেলেছেন অবশ্য মাত্র ২টি। এই ২টি ম্যাচেই ৩.৯৬ ইকোনমি রেটে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। সুপার ফোরে সর্বশেষ দেখায় টাইগারদের বিপক্ষে ৫৫ বলে মাত্র ৩৭ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন এই পেসার।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ-

লিটন দাস, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিথুন, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), মমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান।

ভারতের সম্ভাব্য একাদশ :

রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, অাম্বাতি রাইড়ু, কেদার যাদব, মহেন্দ্র সিং ধোনি (উইকেটরক্ষক), রবীন্দ্র জাদেজ , ভুবনেশ্বর কুমার, কুলদ্বীপ যাদব, যুবেন্দ্র চাহাল, হার্দিক পান্ডিয়া, জাসপ্রিত বুমরাহ।

শেয়ার করুন: