ড. কামাল

জাতীয় ঐক্যের আসল নেতা কে?

গতকাল শনিবার মহাসমাবেশের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল জাতীয় ঐক্য। মহানগর নাট্যমঞ্চের সমাবেশের মধ্যে দিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়া আত্মপ্রকাশ করল। কিন্তু এই সমাবেশ কার নেতৃত্বে হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন।

দেড় ঘণ্টা পর সমাবেশস্থলে এসে তাতের সভাপতিত্ব করেন বিকল্পধারার নেতা অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সমাবেশে সমবেত শ্রোতার ৮০ ভাগই ছিল বিএনপি-জামাতের কর্মী। ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চ ভাড়া নেওয়া থেকে শুরু করে এর সব টাকার যোগান দেন তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ আবদুল আউয়াল মিন্টু। আর সমাবেশের যে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়: তা লন্ডন থেকে তারেক জিয়া প্রণীত। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা কে? ড. কামাল হোসেন? অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী নাকি তারেক জিয়া?

বিএনপি তাদের স্থায়ী কমিটির সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তারা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দেবে। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া এবং লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া দুজনই অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে শুধু ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যের পক্ষে ছিলেন। কিন্ত ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে জানিয়ে দেন যে, বি চৌধুরীকেও ঐক্য প্রক্রিয়ায় লাগবে।

এ ব্যাপারে কৌশলগত যুক্তিও বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বোঝান ড. কামাল হোসেন। মূলত বৃহস্পতিবার ড. কামাল হোসেনের ল চেম্বারে বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে ড. কামালের বৈঠকে অধ্যাপক চৌধুরীকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

ড. খন্দকার মোশাররফ বি. চৌধুরীকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে বেগম জিয়া ও তারেকের আপত্তির কথা বলেন। পরে ড. কামাল হোসেন লন্ডনে তারেক জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন। পরে তারেক জানিয়ে দেন যে ড. কামাল যেভাবে বলবে সেভাবেই যেন বিএনপি কাজ করে। ড. কামাল এরপর অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে টেলিফোন করে বলেন যে, বিএনপির নেতৃবৃন্দ তাঁর সঙ্গে (অধ্যাপক বি. চৌধুরীর সঙ্গে) দেখা করতে যেতে চায়। ড. কামাল হোসেনের মধ্যস্থতায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বিএনপির তিন নেতা অধ্যাপক চৌধুরীর বাসায় যান।

তারা সেখানে ‘অতীতে তাঁর প্রতি অন্যায়ের’ জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে ক্ষমাও চান। এরপরই অধ্যাপক চৌধুরী জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে যোগ দিতে সম্মত হন। ড. কামাল হোসেন এবং অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী চেয়েছিলেন, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত জন সংযোগমূলক কর্মসূচি রাখতে। গত ২৮ আগস্ট ঐক্য প্রক্রিয়ার যে বৈঠক ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে সিদ্ধান্ত ছিল যে, ২৮ অক্টোবর যদি সংসদ ভেঙ্গে না দেয়া হয়, তাহলে আন্দোলন শুরু করবে।

কিন্তু তারেক জিয়ার হস্তক্ষেপে এই সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। তারেক জিয়াই ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয়ার জন্য চাপ দেন ড. কামালকে। আগামী ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। তারেক তাঁর আগেই রাজপথ উত্তপ্ত করতেই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। গতকালের সভায় এটা প্রমাণ হয়েছে, ড. কামাল বা বি. চৌধুরী নন; জাতীয় ঐক্যের আসল নেতা তারেক জিয়া।

শেয়ার করুন: