অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে রওশন আরা (৫৫) নামের এক বৃদ্ধার দুটি কিডনিই সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। বৃদ্ধার ছেলে চলচ্চিত্র নির্মাতা রফিক শিকদারের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের নাম করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান তার মায়ের দুটি কিডনিই সরিয়ে ফেলেছেন। এই ঘটনার তদন্ত এবং প্রকৃত অপরাধীর কঠিন বিচার চাইছেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইউরোলজি সমস্যা দেখা দেয়ায় গত ২৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মা রওশন আরা বেগম (৫৫) কে ভর্তি করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রফিক সিকদার। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ইউরোলজি বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান দুলাল জানান, রওশন আরা বেগমের বাম কিডনির প্রসাবনালী ব্লক হয়ে গেছে। যার ফলে কিডনিটি ফুলে যায়। তবে ভালো ছিলো ডান পাশের কিডনি।
গত ৫ই সেপ্টেম্বর অকেজো কিডনিটি ফেলে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে অপারেশন হয় রওশনের। অপারেশনের পর রাতেই তার অবস্থা খারাপ জানিয়ে, তাকে বাইরের কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে যেতে বলেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। পরে তাকে ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
সেখানে সিটি স্ক্যানে জানা যায় রওশনের দুটি কিডনীর একটিও নেই। সেই কারনে তার প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। পরিক্ষা নীরিক্ষার পর ডাক্তারও নিশ্চিত; তার দুই কিডনীর একটাও শরীরে নেই। রফিক সিকদার বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অপারেশনের আগে সব পরীক্ষাতেই মায়ের ডান পাশের কিডনি ভালো বলে উল্লেখ আছে। আর সেটি দিয়েই তিনি বাকি দিনগুলো বেঁচে থাকতে পারবেন, এমন নিশ্চয়তা পেয়েই আমরা বাম কিডনি ফেলে দিতে রাজি ছিলেন।
“কিন্তু চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের নাম করে মায়ের দুটি কিডনিই সরিয়ে ফেলেছেন। চোখের সামনে আমার মা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। সন্তান হয়ে এই দৃশ্য আমাকে দেখতে হচ্ছে।
আমি এই ঘটনার তদন্ত এবং প্রকৃত অপরাধীর কঠিন বিচার চাই।’ প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানান নির্মাতা রফিক সিকদার। এঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করে অভিযুক্ত চিকিৎসকের দ্রুত অপসারণ ও শাস্তি দাবি করেছেন চলচ্চিত্রঙ্গন ছাড়াও মিডিয়া সংশ্লিষ্ট অনেকেই। নিন্দার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করে বিভিন্ন জনে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
এদিকে এ ঘটনার নির্মাতা রফিক শিকদারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন এবং চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারন সম্পাদক জায়েদ খানসহ অনেকেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অপরারেশন করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দাবী করেন, অকেজো কিডনি হওয়ায় সিটি স্ক্যানে দেখা যাচ্ছে না। তবে তার এই কথা মানতে নারাজ অন্য চিকিৎসকরা। তারা বলছেন শরীরে কিডনি থাকলে সিটি স্ক্যানে আসবেই।