রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ‘ভুল চিকিৎসা ও অকেজো কিডনি ফেলতে গিয়ে ভালো কিডনিটি ফেলে দেওয়ার’ অভিযোগ তুলেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রফিক শিকদার।
বিষয়টি নিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর চলচ্চিত্র নির্মাতা রফিক শিকদারের সঙ্গে কথা হলে এ চলচ্চিত্র নির্মাতা বলেন, ‘আমার মা রওশন আরা (৫৫)। মায়ের বাম কিডনিতে সমস্যা ছিল। মূত্রনালীতে ইনফেকশন ছিল।
কিন্তু ডানের কিডনিটি পুরোপুরি ভালো ছিল, ঠিক সুস্থ মানুষের মতো। তার ডায়বেটিস নাই, হাই প্রেসার নাই বাড়তি কোনো রোগ নাই। তো বাম কিডনির যে ইনফেকশন ছিল তা সার্জারি করা হলে মা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। ইনফেকশন অপসারনের পর মা সুস্থভাবে চলাফেরা করছিলেন।
এরপর ঈদুল আজহায় আমারা তখন মাকে নিয়ে পাবনায়। ঈদের পরে হঠাৎ করে পিজি হাসপাতাল (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতাল) থেকে ফোনে করে জানানো হল, আপানার মায়ের বাম কিডনিটা ফেলে দিতে হবে। ফেলে দিলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। তা না হলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা হতে পারে।
তো আমরাতো ভেবেছিলাম, ডাক্তার ভালো মানুষ। যা করছেন বুঝে শুনেই করছেন। বামের কিডনি ফেলে দিলে মা সুস্থ হয়ে যাবেন এই আশায় ছিলাম।
এরপর মাকে নিয়ে আমারা চলে আসলাম ঢাকায়। ৫ সেপ্টেম্বর কিডনি ফেলে দেওয়ার অপারেশন হলো। অপারেশনের পরপর প্রথমে মা ভালো ছিলেন। এরপর তিনি, অসুস্থ হয়ে গেলেন।
হঠাৎ করে ডিউটি ডাক্তার আমাকে জানলেন, আমার মাকে এখনই আইসিইউতে নিতে হবে। আমি বললাম, পিজির আইসিইউতেই নেওয়া হোক। ডিউটি ডাক্তার জানালেন, তখন পিজির কোনো আইসিইউ ফাঁকা নেই। মাকে নিয়ে যেতে হবে অন্য কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে।
এরপর পিজি থেকে মাকে নিয়ে গেলাম রাজধানীর মগবাজারের ইনসাফ বারাকা কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে তারা ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করতে বলেন। ল্যাব এইডে সিটি স্ক্যান করার পর ওই পরীক্ষা দেখে, ল্যাবএইডের ডাক্তাররা জানালেন, আমার মায়ের কোনো কিডনি নাই।
আমি বিষয়টি বিশ্বাস করিনি। রিপোর্ট নিয়ে চলে এলাম ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তার বলেন, ‘‘আমি ভেবেছিলাম আপানার মায়ের বাকি থাকা ডান কিডনিটা হয়তো নষ্ট হয়েছে। তাই পরীক্ষা করাতে দিয়েছি।
কিন্তু রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে তার একটি কিডনিও নেই। আমি আর আপনার মায়ের কী চিকিৎসা করব? কিডনিইতো নাই। চিকিৎসাটা করাব কীসের? আগে যে হাসপাতালে ছিল সেখানেই নিয়ে যান।’’
তাও আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ পিজি হাসপাতালে মায়ের অপারেশনের সংশ্লিষ্ট ডা. হাবিবুর রহমান দুলালতো আমাকে বলেছেন, ‘তিনি আমার মায়ের বামের অকেজো কিডনিটি ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু দুইটা কিডনি যে গোপনে ফেলে দেবেন তা আমি কল্পনা করতে পারছিলাম না।
এরপর আমি অভিনেতা নিরব হোসেনের পরামর্শে আবারও যাচাই করার জন্য চলে যাই, বিআরবি হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরাও, মায়ের রিপোর্ট দেখে বলেন, “আপনার মায়ের কোনো কিডনি-ই নাই।” তারা মায়ের পূর্বের রিপোর্টগুলোও দেখেন।
তারপরেও আমি তাদের কাছে নিশ্চিত হয়ে আবারও প্রশ্ন করে বলি, “আমার মায়ের তো একটি কিডনি ফেলে দেওয়া হয়েছে। দুইটা নয়।” তারা বললেন, “আমারা শতভাগ চ্যালেঞ্জ করে বলছি তার এখন একটি কিডনি নাই।” আমি তাদের আবারও জিজ্ঞেস করি, “আমি কি এই রিপোর্টগুলো দিয়ে চ্যালেঞ্জ করেতে পারি?” সেখানকার চিকিৎসকরা বললেন, “আপনি শতভাগ চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।”
বিষয়টি নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অপারেশনের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলালের দাবি, বাকি থাকা কিডনিটি অকেজো থাকায় ডানের কিডনিটি সিটি স্ক্যান পরীক্ষার ফলাফলে ধরা পড়ছে না।
ওই অপারেশনের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমানের বিষয়ে নির্মাতার কাছে থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘পিজির ওই ডাক্তার আমাকে বললেন, “আপনি কারো কথায় কান দিয়েন না। বিভ্রান্ত হইয়েন না। আমরা আপনার মায়ের যেন ভালো হয়, সেই কাজই করব।“ কয়েকদিন ধরে এসব বলে আস্বস্ত করছিলেন। আরও নানা কথা বলছিলেন।
আমি তাকে বললাম, “আমার মায়েরতো কিডনি-ই নাই। তাইতো তার কোনো কিডনি কাজ করছে না।” সবশেষ ডা. হাবিবুর রহমান জানান, “আমার মায়ের ডান কিডনিটা হয়ত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে তাই কাজ করছে না”। সেই সঙ্গে আমার মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পরামর্শ দেন।
আমার মনে হয় তিনি আমার মায়ের কিডনি হয়তো কোথাও বিক্রি করে দিয়েছেন।’
নির্মাতা আরও বলেন, ‘দৃশ্যমান সত্য আমার মায়ের এখন একটি কিডনিও নেই। ডাক্তার আরেকটা কিডনি কি করেছেন? সুস্থ কিডনিটা কি করেছেন? সেটার জবাব আমি তাদের কাছ থেকে পাইনি। আমার মাকে আমি সুস্থ দেখতে চাই। অন্যথায় আমি আইনগত ব্যবস্থার দিকে আগাব।’ তবে এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।