বিট কয়েন

২ টাকা মুজুরির সেই মেয়েটি আজ যেভাবে ১০০ কোটির মালিক

নাটক বা সিনেমায় এমন অনেক গল্প দেখা যায় যেখানে, কোন ব্যক্তি সামান্য পুজি নিয়ে অনেক বড় লোক হয়ে যায়। কঠোর পরিশ্রের ফলে মানুষ শুন্য থেকে শিখরে পৌছতে পারে সেটাই দেখানো হয় অনেক সিনেমায়। তবে এবার সিনেমা নয়, বাস্তবেই এমন কাজটি করে দেখালেন এক নারী। কিশোরী বয়সে মাত্র ২ টাকা মুজুরি নিয়ে কাজ করেছেন ভারতের মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা কল্পনা। ১৯৬১ সালে দলিত পরিবারে জন্ম নেয়া কল্পনার বাবা ছিলেন কনস্টেবল। তার মাইনে পাওয়া ৩০০ টাকায় দশ জনের পরিবার চলত অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে।

আর সেই অভাবের কারনেই ১২ বছর বয়সেই বিয়ে দেয়া হয় কল্পনাকে। বিয়ের পর কল্পনা চলে আসেন মুম্বই। তবে শ্বশুরবাড়িতে ভালো পরিবেশ ও খাওয়া পাওয়া তো দুরস্থান, কল্পনার উপরে রীতিমতো অত্যাচার করা হতো। ছয় মাস পর মেয়েকে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন বাবা। অনেক দু:খের মধ্য দিয়ে চলছিল তার জীবন। সমাজের মানুষ তাকে দেখছিল অন্য চোখে। এজন্য বিষ কিনে মরার চেষ্টাও করেন তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে।

তবে সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। আর এই বেঁচে যাওয়া জীবনটাকেই কাজে লাগান এই কিশোরী। ফের মুম্বাইয়ে চলে আসেন এবং একটি মিলে কাজ করা শুরু করেন যেখানে দৈনিক ২ টাকা মুজুরি পেত। এভাবে কিছুদিন চলার পর সেলাই মেশিন কিনেন এবং ঋন নিয়ে আসবাবপত্র কিনে ব্যবসা শুরু করেন। পরে খুলেন বিউটি পার্লার। এরপর রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাও করেন তিনি। আর এভাবেই পাল্টে যায় তার জীবন।

কামানি টিউবস কোম্পানির কর্মীরা ২০০০ সালে কল্পনা সরোজের কাছে গিয়ে সংস্থা চালানোর কথা বলেন। কারণ তার আগের কয়েকবছরে সংস্থার ব্যবসা পুরো ধসে গিয়েছিল। মালিককে সরিয়ে কর্মীদের মালিকানা দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা কোম্পানি চালাতে পারেননি। ব্যাঙ্ক থেকে অনেক ঋণ নিয়ে ফেলেন। ফলে কল্পনা বিষয়টি শুনেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ঋণ মকুবের আবেদন করেন। ও ব্যাঙ্কের সব টাকা ফেরত দেবেন বলে আশ্বাস দেন।

আদালত কল্পনাকে ৭ বছরের সময় দেয়। তবে কল্পনা ১ বছরে সকলের টাকা ফিরিয়ে দেন। তখন তিনি মালিকানা পেয়ে যান কামানি টিউবসের। এভাবেই ২ টাকা দিয়ে শুরু করে ১০০ কোটি টাকার বেশি সংস্থার মালিক হয়ে গিয়েছেন কম্পনা। ২০১৩ সালে ভারত সরকার কল্পনাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছে। ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্কের বোর্ড অব ডিরেক্টর্সে তিনি রয়েছেন। ভারতের স্বাধীনতা পরবর্তী আসল আর্থির স্বাধীনতা তৈরির আসল কারিগর কল্পনার মতো মহিলারাই।

শেয়ার করুন: