আসছে ২১ সেপ্টেম্বর দুই দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে যাচ্ছেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর এই সংক্ষিপ্ত সফর। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরেই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী বিনিময় চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। এই চুক্তি চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশ তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবে বলেও আশা করছে বাংলাদেশের আইন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলাপ আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানা গেছে। আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনতে।’ ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের তারিখ ধার্য করা হয়েছে। তারেক জিয়া ঐ মামলার অন্যতম প্রধান আসামি।’
গত জুনে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে যান। প্রধানমন্ত্রীর ওই লন্ডন সফরেই বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক ভাবে তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ফেরত চায়। যুক্তরাজ্যের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন। এরপর বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্য দুই দেশের মধ্যে বন্দী ও অপরাধী বিনিময় চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে।
ঐ চুক্তি স্বাক্ষর হলে, বাংলাদেশের কোনো দণ্ডিত ব্যক্তি যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিলে ব্রিটিশ সরকার তাকে ফেরত দেবে। আবার ব্রিটিশ কোনো অপরাধী বাংলাদেশে অবস্থান নিলে তাকে বাংলাদেশ সরকার ফেরত দেবে। পররাষ্ট্র দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বেশ কটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর তারেক যুক্তরাজ্যে চিকিৎসার জন্য যান। ২০১৩ সালে তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্রিটিশ সরকারের কাছে জমা দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। বর্তমানে তারেক জিয়া একজন রাজনৈতিক আশ্রয় লাভকারী উদ্বাস্তু হিসেবে লন্ডনে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে একটি মানি লন্ডারিং মামলায় এবং জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় তারেক ১৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র গুলো বলছে, দু’টি রায়ের সত্যায়িত কপি যুক্তরাজ্যের হোম ডিপার্টমেন্টে পাঠান হয়েছে। তবে, আইন মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ১০ অক্টোবরের আগেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। তা নাহলে, তার দেশে ফেরা অনিশ্চিত হতে পারে। ঐ সূত্রের মতে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় যদি তারেক জিয়া সর্বোচ্চ শাস্তি পান, তাহলে চুক্তিতে যাই থাকুক ব্রিটিশ সরকার তাকে বাংলাদেশে পাঠাবে না। গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ তারেক জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড সাজার প্রার্থনা করেছে।
কিন্তু ব্রিটেনের মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্ত ব্যক্তির যদি তার দেশে গিয়ে প্রাণহানি বা মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তির আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাঁকে ব্রিটেন ঐ দেশে ফেরত পাঠায় না। ইউরোপের অনেক দেশের মতোই ব্রিটেনও মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করেনা। তবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশাবাদী যে, চুক্তি স্বাক্ষর হলে, স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই তারেককে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।