দেশের প্রথম ওয়াই আকৃতির সেতু জনসাধারণের চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ সেতুটি নির্মাণের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা জেলার হোমনা ও মুরাদনগরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলো।
এ সেতুটি ওয়াই আকৃতির হওয়া কারনে হ্রাস পেল বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের ১২ কিলোমিটার দূরত্বও। সেতুটি কেন ‘Y’ আকৃতির হলো? উদ্বোধনের সময় এর কারন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ও নাভানা বিল্ডার্সের তত্ত্বাবধানে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হয়।
ভূমি অধিগ্রহণসহ ৭৭১ মিটার দীর্ঘ এবং ৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের সেতুটিতে ২২টি পিলার, ২৪টি স্প্যান রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
রোববার দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমিল্লা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার হোমনা-বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তিতাস নদীর উপর নবনির্মিত দেশের প্রথম দৃষ্টিনন্দন এ ওয়াই আকৃতির ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেতুর’ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেতুটি নির্মাণের ফলে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ স্বল্পসময়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন। অন্যদিকে লাঘব হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, নবীনগর ও কুমিল্লার মুরাদনগর, তিতাস ও হোমনার লাখ লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগে কমে আসবে দুই-তিন ঘণ্টা সময়।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সেতুটি নির্মাণের ফলে ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যোগাযোগ সহজ হবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম-ঢাকার বিকল্প পথ হিসেবেও ব্যবহার হবে সেতুটি।
ওয়াই সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সেতু নিয়ে তিন উপজেলার মানুষের মধ্যে ঝগড়া ছিল। এরপর আমি সবাইকে ডাকলাম। ম্যাপ নিয়ে বসলাম।
এরপর ডিজাইন পরিবর্তন করে দিয়ে আমি নতুন করে বললাম- সেতুর একটা অংশ বাঞ্ছারামপুর থেকে চলে যাবে মুরাদনগর, আরেকটা অংশ চলে যাবে হোমনায়। তাহলে সেতুটি দেখতেও অন্যরকম হবে, যা এখন ওয়াই সেতু নামে পরিচিতি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, সেতুটি ওয়াই আকৃতির হওয়া কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর এবং কুমিল্লার হোমনা, মুরাদনগর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দূরত্ব কমে আসবে।
উদ্বোধন উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ বাঞ্ছারামপুর আসনের সংসদ সদস্য এবি তাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসন নবীনগরের সংসদ সদস্য ফাইজুর রহমান, কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনের সংসদ সদস্য ইউছুফ আব্দুল্লাহ হারুন,
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম, ইউএনও শরিফুল ইসলাম, হোমনা ইউএনও খান মো. নাজমুস শোয়েবসহ তিন সহস্রাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ভিডিও কনফারেন্সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ মুন্সি বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজল মনি, হোমনা পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।
সেতু উদ্বোধন ফলকটি স্থানীয়ভাবে উন্মোচন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এবি তাজুল ইসলাম, নবীনগরের সংসদ সদস্য ফাইজুর রহমান ও কুমিল্লা মুরাদনগর আসনের সংসদ সদস্য আলহজ্ব ইউছুফ আব্দুল্লাহ হারুন।