ক্ষুদ্রতম প্ল্যাংকটন থেকে শুরু করে অতিকায় প্রাণী—সব ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীই যে প্লাস্টিক খাচ্ছে তার অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্লাস্টিক দেখতে কোনো খাবারের মতো নয় এবং এর কোনো গন্ধও নেই। তারপরও কেন প্লাস্টিক খাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী?
নেদারল্যান্ডসের রয়্যাল ইনস্টিটিউট ফর সি রিসার্চের মাইক্রোবায়াল ইকোলজিস্ট এরিক জেটলার এ কথার সঙ্গে একমত নন। তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘এর পরের বার যখন সমুদ্র সৈকতে যাবেন, তখন এক টুকরো প্লাস্টিক কুড়িয়ে নিয়ে সেটার গন্ধ শুঁকে দেখুন। মেছো গন্ধ পাবেন।’
এরিক জেটলার এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। সমুদ্রে সব প্লাস্টিকের ওপরই দ্রুত একধরনের মাইক্রোব বা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুর আস্তরণ পড়ে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় একে বলা হয় ‘প্লাস্টিস্ফেয়ার’।
এই পিচ্ছিল জীবন্ত আস্তরণ থেকে যে রাসায়নিক নির্গত হয়, সেটাই আসলে প্লাস্টিককে লোভনীয় খাদ্যে পরিণত করে। কারণ প্লাস্টিক থেকে তখন খাদ্যের মতোই গন্ধ বের হয় ও এর স্বাদও হয় সে রকম।
একটি বিশেষ যৌগ ডাইমিথাইল সালফাইড (ডিএমএস) এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেসব সামুদ্রিক পাখি প্লাস্টিক খায়, তাদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এ রকম। তবে কিছু কিছু প্রাণী, যেমন তিমি যখন প্ল্যাংকটন খাওয়ার জন্য পানি ছাঁকে, তখন আসলে তারা এর সঙ্গে প্লাস্টিকও গিলে ফেলে।
বিশ্বজুড়েই সমুদ্রে প্লাস্টিকের আবর্জনা বাড়ছে। ২০১৫ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন প্লাস্টিক সুমদ্রে পতিত হয়। কিছু প্লাস্টিক সামুদ্রিক স্রোতে গিয়ে ঘুরপাক খেতে থাকে।
এ রকম স্রোতে পড়লে, তখন প্লাস্টিক ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণায় পরিণত হয়। তখন এই মাইক্রোপ্লাস্টিক চলে যায় সামুদ্রিক জীবের পেটে।
ই প্লাস্টিক সামুদ্রিক প্রাণীর কী ক্ষতি করছে? রসকাইলড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান সাইবার্গ বলেন, ‘প্লাস্টিকের কারণে সামুদ্রিক প্রাণী শ্বাসরুদ্ধ হয়ে বা খাদ্যাভাবে মারা যেতে পারে, কারণ প্লাস্টিক তাদের পরিপাকনালি রুদ্ধ করে দিচ্ছে।’
প্লাস্টিকের কারণে ইতোমধ্যে কিছু জাতের অ্যালবাট্রস পাখির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারা ভালোভাবেই দেখার সুযোগ পেয়েছেন কীভাবে নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী প্লাস্টিকের দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সমুদ্রকে কীভাবে প্লাস্টিকের দূষণমুক্ত রাখা যাবে? গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রশান্ত মহাসাগরে এক বিরাট পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় সাগরে ৬০০ মিটার লম্বা ‘ফ্লোটার’ পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা প্রতি মাসে পাঁচ টন করে প্লাস্টিক ছেঁকে তুলতে পারবে।
ক্রিস্টিয়ান সাইবার্গ মনে করেন, সাগরে এ রকম পরিচ্ছন্নতা অভিযান অবশ্যই ভালো পদক্ষেপ। কিন্তু তার মতে, ‘এই সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান আসলে সাগরে প্লাস্টিক ফেলা পুরোপুরি বন্ধ করা। সেটা একমাত্র সম্ভব আমরা সবাই যদি প্লাস্টিক ব্যবহার এবং ছুড়ে ফেলার অভ্যাস পুরোপুরি পাল্টে ফেলতে পারি।’